বৃদ্ধাশ্রম থেকে মায়ের চিঠি

খোকা,

কেমন আছিস জানতে চাইবো না। কেননা সব মায়েদের চাওয়াই থাকে তার খোকা যেন সব সময় ভাল থাকে, সুস্থ থাকে। আমাকে ছেড়ে নিশ্চয়ই তুইও ভাল আছিস। আর ভাল থাকবি না কেন বল?

ভাল থাকার জন্য তো তোরা আমায় এখানে পাঠিয়ে দিয়েছিস। আমি ভাল আছি, তবে ছোটদাদুর জন্য মনটা খুব কাঁদে রে। ওকে ভুলে থাকতে পারি না। বউমাও নিশ্চয় খুব ভাল আছে।

যখন একলা থাকি তোর বাবার স্মৃতি খুব মনে পড়ে। বাড়ির প্রতিটা আসবাবপত্রে তোর বাবার হাতের ছোঁয়া লেগে আছে। ইচ্ছে ছিল জীবনের শেষ অবধি সেগুলো বুকে আগলে রাখবো।

কিন্তু তোরা আমার সুখ চাস বলেই নাকি এই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিস। তাই মাঝে মাঝে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লেও এই ভেবে হেসে উঠি যে তোরা আমায় কত ভালোবাসিস।

জগতে কোন ছেলে তার মাকে ভালোবেসে এমন সুন্দর জায়গায় পাঠায়। যেখানে কোন কাজ করতে হয় না। শুধু বসে বসে খাওয়া আর গল্প করে সময় কাটানো যায়।

জানিস খোকা, তুই তখন খুব ছোট। কেবল মাত্র হাঁটতে শিখেছিস। থাপুস-থুপুস করে পা ফেলে বাড়ীর আঙিনা জুড়ে হেঁটে বেড়াস। আমি তোর পাশাপাশি হাঁটছি। হঠাৎ তোর পা কেটে রক্ত বের হল। তোর বাবা তো সেটা দেখে আমার সাথে সেকি রাগ।

পারে তো বাড়ি থেকে আমায় বের করে দেয়। তোকে কেন বুকে না রেখে মাটিতে হাঁটতে দিয়েছি এই অপরাধে। সেদিন আমরা তোর চিল্লা-চিল্লি দেখে কিছুই খেতে পারি নি।

সারারাত নির্ঘুম কেটেছে দুজনের। তুই এখনও ভাল করে বাঁ পায়ের নিচে তাকালেই দেখতে পারবি আমাদের দুজনের আদরের ছোঁয়া।

খোকা, তোর বাবা প্রায়ই বলতো দেখে নিও আমাদের খোকা একদিন মস্ত বড় হবে। তোর বাবার কথা সত্যি হয়েছে। তুই অনেক বড় হয়েছিস। দোয়া করি আরও বড় হওয়ার। যতো বড় হলে মানুষ আকাশ ছুঁতে পারে। তোর জন্য মন খুব কাঁদে।

কতোদিন হলো তোকে দেখিনা। এতো ব্যস্ত থাকিস কেন? এই বুড়ো মাকে একদিন একটু সময় করে দেখতে আসিস। ভয় নেই কিছুই নেব না তোর কাছে। শুধু তোর মুখটা দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে নিব।

তোকে এখন দেখতে না পারায় আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন খাঁ খাঁ করে। হাহাকারের সুরে হৃদয়টা মোচড় দেয় রে। আমি তোকে জন্ম দিয়েছি। বুকে আগলে রেখে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছি। ছোট্ট বিছানায় পেচ্ছাব করে ভিজিয়ে দিয়েছিস যখন তখন আমি সেই ভেজা বিছানায় শুয়ে তোকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি।

একেই বলে বুঝি জন্মান্তরের বাঁধন। এই বাঁধনটা কেটে দিতে নেইরে খোকা। কেটে দিলে সবাই যে তোকে অমানুষ ভাববে। আর আমি মা হয়ে সেটা সইবো কেমন করে বল?

আজ আর নয়। আমার বংশের প্রদীপ ছোটদাদুর প্রতি খেয়াল রাখিস। ভাল থাকিস খোকা। হাজার বছর বেঁচে থাকিস।

ইতি,

তোর মা।

লেখা: শুভদীপ হালদার

কলকাতা , ভারত

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //