আইটি বিভাগের উন্নয়নে যা প্রয়োজন

তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই বিশ্বে টিকে থাকতে সময়ের সাথে সাথে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রটি অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি ক্ষেত্র যার পরিধি মিনিট এবং সেকেন্ডে পরিবর্তিত হচ্ছে। সাধারণ পদ্ধতিতে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য প্রযুক্তি সম্মৃদ্ধ করতে আইটি বিভাগের অবদান অন্যতম।

প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগ যদি হয় দক্ষ, কেবল তখনই তাদের পক্ষে সম্ভব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনার যাচাই বাছাই পূর্বক সঠিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণনয় করা। আইটি বিভাগ অথবা আইটি বিশেষজ্ঞ মহলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হলে তা হবে সময়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ। এই অসংগতিপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা প্রাতিষ্ঠানিক আইটি সেক্টরের উন্নয়নে একটি প্রতিবন্ধকতা। 

কোম্পানির আইটি বিভাগের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সমূহ: 

১.বিদ্যমান কর্মীদের নতুন প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি। 

২.বিদ্যমান কর্মীদের জ্ঞান বিনিময়ের অনিহা। 

৩.বিদ্যমান কর্মীদের দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা।

৪.অপর্যাপ্ত কর্মীদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।

৫.প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের যথাযথ অবদানের ঘাটতি।

৬.কর্মীদের কাজ মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাখার প্রবনতা।

৭.কর্মীকে জন্মস্থান/এলাকা ভিত্তিক বিশেষ কোনো নজরে দেখা। 

৮.এলাকা ভিত্তিক কর্মীদল তৈরির অপচেষ্টা করা।

কোম্পানির আইটি বিভাগ গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নিয়ম কানুন পালনের মাধ্যমের বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা সমূহ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। 

কর্মী বাছাই প্রক্রিয়া

একটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির সময় অথবা বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের পরিধি বৃদ্ধির সময় নতুন কর্মীদের যোগদান করানোর প্রয়োজন পরে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কোম্পানি উন্নয়ন ও পরবর্তি কার্যক্রম যথাযথ ভাবে পরিচালনা করার জন্য। স্বল্প সময় স্থায়ীত্বকালীন কর্মী, তার নিজের অথবা প্রতিষ্ঠান উভয়েই জন্য ক্ষতিকারক। তাই নতুন কর্মী বাছাই প্রক্রিয়াকে প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন পরিচালনা কার্যক্রম বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। কিছু পরামর্শ এ পর্যায়ে অনুসরণ করা যেতে পারে।

১.সর্বদা নতুনদেরকে উৎসাহিত করতে হবে ও তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

২.বাছাই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩.সবকিছুর আগে দক্ষতার বিবেচনা করতে হবে। 

৪.কোনো ক্রমেই যেন একজন কর্মীকে তার ধর্ম, বর্ণ বা এলাকা/জন্মস্থান দ্বারা বিবেচিত হতে না হয় এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। 

৫.নতুন কর্মীদের কর্মপরিবেশ ভীতির প্রশমনে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

একজন নতুন কর্মী যেকোনো প্রতিষ্ঠানে নিজের সবটুকু দিয়ে কাজ করার এবং সেখানে নিজের অবদান রাখার মানসিকতা নিয়েই যোগদান করে। কর্মী যদি তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌছাতে ব্যর্থ হন তবে এর কারণ কর্মীর অদক্ষতা, প্রতিষ্ঠানিক আচরণ অথবা কর্মপরিবেশ। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকর্তাদের উচিত কর্মীদের কাজ করার মানসিকতাকে উৎসাহিক করা।

কর্ম বন্টণ পদ্ধতি

প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া প্রতিষ্ঠান ও কর্মী উভয়রই জন্য মঙ্গলজনক। তবে এই বৃদ্ধি পাওয়া কখনো কখনো কর্মীদের উপর বাড়তি কাজের চাপ সৃষ্টি করে। কর্মীরা যেন কখনই কর্মপরিধি বৃদ্ধিকে তাদের জন্য নেতিবাচক মনে করতে বাধ্য না হয় এ বিষয়ে নজর রাখা জরুরি। সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা ও কর্মবন্টন পদ্ধতি প্রনয়ন করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যেমন: 

১.কর্মীদের কর্মবন্টন তার যোগ্যতার ক্ষেত্রের উপর বিবেচনা করতে হবে। 

২.পদবির উপর কর্মবন্টন নিশ্চিত করতে হবে।

অযৌক্তিক কর্ম বন্টনের ফলে সৃষ্ঠ অতিরিক্ত কাজের চাপ কর্মীর কর্মদক্ষতা ও সুষ্ঠু ভাবে কাজ করার মানসিকতার ওপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

কর্মীর দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম

অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি কর্মক্ষেত্র হলো আইটি সেক্টর। এখানে প্রত্যেক কর্মীকে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার মধ্যে থাকা উচিত। সাধারণত একজন কর্মীর পক্ষে কাজের বাহিরে শেখার সুযোগ কম থাকে। সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো, দক্ষতার উন্নয়ন কার্যক্রম যদি তার দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা যায়। 

১.প্রতিনিয়ত কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

২.কর্মক্ষেত্রে শিক্ষনীয় কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মক্ষেত্র ও কর্মপরিবেশ

কাজের আনন্দ আসে সুস্থ কর্মপরিবেশের মাধ্যমে আর সহকর্মীদের আভ্যন্তরীন সামাজিক বন্ধুত্বসুলভ যোগাযোগের মাধ্যমে। প্রতিদ্বন্ধীতাপূর্ণ পরিবেশ প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের জন্য অনুপযোগী। দিনের শুরুতে যে কর্মীর চেহারায় হাসি ছিল দিনের শেষেও তার চেহারায় হাসি পাওয়া গেলে তবেই সে কর্মপরিবেশ আদর্শ।

১.কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

২.কর্ম পরিবেশকে সর্বদা ভয়ভীতি মুক্ত এবং সকলের অংশগ্রহণ মূলক হতে হবে।

৩.কর্মক্ষেত্রকে দলীয়করণ মুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কর্মীর আর্থিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তা

একজন কর্মী যদি অফিস থেকে স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা নিয়ে বাসার ফিরতে না পারে তবে তার সামাজিক জীবন ব্যহত হবে। এর ফল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কর্মীর কাজকে ক্ষতিগ্রস্থ করে তুলবে।

১.কর্মীদের কাজ করার স্বাধীনতা প্রয়োজনীয়।

২.নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ না পাওয়ায় কর্মীরা মানসিক অসুস্থতা বোধ করেন।

৩.ছোট ছোট উৎযাপন কর্মীদের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। 

৪.পর্যায়ক্রমিক টিম ভিত্তিক ছোট বড় ভ্রমণের আয়োজন কর্মী দলের মধ্যে আন্ত-যোগাযোগ বৃদ্ধি করে।

৫.ছোট-বড় যে কোনো সুখবর সংশিষ্ট কর্মী দল বা নিদিষ্ট কর্মীকে জানানো তাদের আত্নবিশ্বাস বাড়ায়।

কর্মীর পদ উন্নায়ন ও অবদানের মূল্যায়ন 

প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের অবদান মূল্যায়ন করে সেই কর্মীদের পদোন্নতি দেওয়া হয় তার কাজের প্রতিদান স্বরুপ। এক্ষেত্রে প্রথমে বিবেচনাযোগ্য বিষয় হলো কাজ। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে কর্মীর ব্যয়িত সময়কাল এবং অবদান। আইটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মীদের কাজ ও অর্জিত জ্ঞানকেই সর্বাগ্রে বিবেচনা করা উচিত কর্মীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে। 

১.আইটি কর্মীর পদোন্নতি কোনো ক্রমেই শুধু তার কর্ম কালের উপর বিবেচ্য হতে পারে না। যদি না সময়ের সাথে সাথে কর্মীর দক্ষতার উন্নয়ন ঘটে।

২.কর্মীদের পদ পবিরর্তন ও উন্নয়ন অবশ্যই সুচিন্তিত হতে হবে।

৩.সর্বদা সর্তক থাকতে হবে একজন নতুন ও দক্ষ কর্মী যেন কোনো ভাবেই অদক্ষ কর্মীর অধিনে নিযুক্ত না হয়। 

উপরোক্ত আলোচিত বিষয়াদিকে যদি আমরা প্রতিষ্ঠানিক নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে ধারণ ও পরিচালনা পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত অবস্থানে পৌছাতে পারবো। আমাদের ব্যয়িত সময়, অর্থ ও শ্রম আমাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও দেশের আইটি সেক্টরের উন্নয়নে অবদান রাখবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //