নির্বাচনের আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রসঙ্গে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। আপনার মধ্যে আপনার বাবার রক্ত প্রবাহিত। আপনার বাবা যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি সদ্য  স্বাধীন দেশে সাহস করে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। অনেক বাধা-বিপত্তি, চড়াই-উৎরাই এর পরে আপনি ক্ষমতায় এসে ২৬ হাজারের প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় জাতীয়করণ করেন। এটা বাংলাদেশের জন্য মাইল ফলক হয়ে আছে।

এখন মাননীয় নেত্রী আপনি এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে দয়া করে একটু নজর দিন। কারণ এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা রাষ্ট্রীয় চরম বৈষম্যের শিকার। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য ও রাষ্ট্র প্রদত্ত অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাহাড়সম বিরাজমান। উদাহরণ স্বরূপ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যখন NTRC প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করেন তখন তিনি মাত্র ১০০০হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পান। অথচ একজন সরকারি স্কুল ও কলেজের একই পদমর্যাদার শিক্ষক তার জাতীয় বেতন স্কেলের ৪৫℅ বাড়ি ভাড়া পান। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার শতকরা ৯৮ ভাগ এমপিও ভুক্ত স্কুল, কলেজ কারিগরি ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা একই পাঠক্রম, একই একাডেমির সিলেবাসের পাঠ দান, মূল্যায়ন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এবং রাষ্ট্রীয় সকল দিবস যথাযথভাবে পালন করে আসছে।

এখন পিএসসির আদলে NTRC মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা মেডিকেল ভাতা পান মাত্র ৫০০ টাকা আর সরকারি শিক্ষকরা পান ১৫০০টাকা। বেসরকারি শিক্ষকরা ঈদ বা পূজা উৎসব ভাতা পান তাদের বেতনের স্কেলের শতকরা ২০ ভাগ। কিন্তু সরকারি শিক্ষকরা তাদের বেতনের স্কেলের সমপরিমাণ দুটি পূর্নাঙ্গ উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২৫% এবং কর্মচারিরা ৫০% উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। বৈশাখী ভাতার ক্ষেত্রেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য বিরাজমান। এইসব ভাতা ছাড়া মাত্র ৩% সরকারি শিক্ষকদের জন্য শিক্ষাভাতা, স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা বীমা। যাতায়াত ভাতা টিফিন ভাতা, শান্তি বিনোদন ভাতা, পাহাড়িয়া অঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য পাহাড়ি ও দুর্গম ভাতা, উপকূলীয় ভাতা, প্রমোশন, বদলি ও চাকরি থেকে অবসরের পর পেনশন পেয়ে থাকেন। মাত্র ৩% শিক্ষকরা সরকারি। এ ৩% সরকারের রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল রকম সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু এমপিও ভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা রাষ্ট্র প্রদত্ত এসব যৌক্তিক ও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছর পরও বঞ্চিত হয়ে আসছেন।

কিন্তু জননেত্রী স্বাধীনতা মূলমন্ত্র ছিল, একটি বৈষম্য মুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত, শোষণ মুক্ত ও সাম্যভিত্তিক একটি সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সকল শ্রেণির নাগরিক তাদের শিক্ষা, মেধা ও দক্ষতা অনুযায়ী সকল রকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাবেন। নেত্রী আপনি অবশ্যই জানেন UNESCO এর মতে GDP ৫% এবং জাতীয় বাজেটে ২০% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অত্যন্ত আবশ্যক। শিক্ষা বিনোয়োগ শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। কারণ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর ও জাতির নির্মাতা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ পরিতাপের বিষয় শিক্ষা খাতে বাজেট প্রত্যেক বছর আমাদের আমলারা কমাতে কমাতে বর্তন ২০২৩-২৪ তৃতীয় বাজেটে GDP ১.৮% এসে ঠেকেছে অথচ বাংলাদেশে UNESCO স্বাক্ষরকারী দেশ।

মাননীয় নেত্রী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৮ ভাগ দায়িত্ব পালনকারী এমপিও ভুক্ত স্কুল, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারিদের ইউনেস্কো এবং আইএলওর সুপারিশ মোতাবেক সমযোগ্যতা, সমঅভিজ্ঞতা ও সমদায়িত্বে নিয়োজিত, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের এক ও অভিন্ন বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের মধ্যে বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। এটা দ্রুত নিরসনের জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই এমপিও ভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয়  করণের ঘোষণা দেন। তাহলে বাঙালি জাতির ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।


আজিজুর রহমান আজম, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //