পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তা

প্রতিটি মানুষ জীবন সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য দিনের প্রথম ভাগ থেকে শুরু করে দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত কর্মে যুক্ত থাকে। সারাদিন কর্ম করে যে অর্থ উপার্জন করে তা পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করে। এ রুটিন চলে প্রতিনিয়ত। মানুষ কাজ করতে করতে এক সময় তার ভিতরের ক্যালরি ক্ষয় হয়ে যায়। তখন শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরকে পুনরায় আগের স্থানে ফিরিয়ে দিতে চাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার এবং বিশ্রাম। একটা সুন্দর ঘুম মানুষকে ফিরিয়ে দিতে পারে সতেজতা। তাই প্রতিটি জীবের প্রয়োজন হয় ঘুমের। 

মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্মের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় শক্তি হারিয়ে ফেলে যা পূর্ণাঙ্গভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ঘুম। যা অন্য কিছু দ্বারা সম্ভব না। ঘুম ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। অনেকে ঘুমহীন রোগে ভোগে। তারা ওষুধ সেবন করে ঘুমায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। যেমন- ওজন কমে যাওয়া, চোখের নিচে কালো দাগ পড়া, মাথা ব্যথা করা, মুখমন্ডলে ব্রণ উঠা, হাত-পা ব্যথা করা, টয়লেট ক্লিয়ার না হওয়া, খাবারের রুচি কমে যাওয়া, তন্দ্রাভাব আসা, ফুড পয়জনিং হওয়া, স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, কোনো কিছুই ভালো লাগে না ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো থেকে নিস্তার পেতে চাই একটা সুন্দর পরিচ্ছন্ন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম। একটা সুন্দর ঘুম একটা সুন্দর সকাল উপহার দেয়।

আমরা অনেকেই মনে করি- ঘুমিয়ে কী হবে? আসলে এটা ঠিক না, কারণ আমাদের পুরো দেহটা একটা ইলেকট্রিক মেশিনের মতো। ইলেকট্রনিক মেশিন যেমন এক টানা চললে ইঞ্জিন হিট হয়ে মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষতি সাধন করে। এর জন্য মেশিন দীর্ঘ সময় চলার পরে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। তদ্রুপ মানুষের ক্ষেত্রেও। মানুষের মেশিন বন্ধ রাখা মানি হচ্ছে বিশ্রাম। মানুষ ঘুমালে তার দেহের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তাই দেহকে ঠিক রাখতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে।

অনেকেই সারাদিন কাজ করে রাতে বিশ্রাম না করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। পাবজি খেলে, ফ্রি ফায়ার, সারারাত চ্যাটিং করে, কথা বলে, নাটক দেখে, মজার ভিডিও দেখে, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখে, লুডু খেলে। যার ফলে এরা সকালে ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারে না। প্রতিদিন লেট করে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বকুনি খায়। এরা কাজ করতে গেলে তন্দ্রা আচ্ছন্নতায় ভোগে যার কারনে কাজে ভুল করে।সঠিকভাবে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারে না। বিশেষ করে ড্রাইভারদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। এরা গাড়ি চালানো অবস্থায় তন্দ্রা আচ্ছন্নতায় ভুগে, চোখে ঝাপসা দেখে। যার কারণে সঠিক সময় সঠিক যন্ত্রাংশ চাপ দিতে পারে না। এর কারনে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটায়। যার ফলে নিষ্পাপ প্রাণগুলোর অকাল মৃত্যু ঘটে। একজন শিক্ষক যদি তন্দ্রা আচ্ছন্নতায় ভোগে তাহলে সে কখনো শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান করাতে পারবে না। তাই কালকের দিনের কাজগুলো সুন্দরভাবে করার জন্য আজকে চাই একটা সুন্দর ঘুম।

ঘুম মানুষকে দেয় মানসিক প্রশান্তি। সকল দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি। মন, মস্তিস্ক রিফ্রেশ করে ঘুম। যার ফলে ঘুম থেকে উঠে যেকোনো কাজ করতে ভালো লাগে। কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। অল্প সময়েই পড়া বুঝে মস্তিষ্কে ধারণ করা যায়। জটিল বিষয় খুব সহজে সমাধান হয়ে যায়। এর জন্য বলা যায় সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন ব্যাপক। তাই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে এমন সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাত জেগে সকল ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাতের ঘুম আর দিনের ঘুম এক নয়। রাতে যেখানে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমালে হয়ে যায়। দিনে সেখানে ১২ ঘন্টা ঘুমালেও রাতের ঘুমের সমতুল্য হবে না। সারাদিন তন্দ্রা আচ্ছন্নতায় ভুগতে হবে। তাই রাতে খুব দ্রুত ঘুমাতে হবে এবং সকালে দ্রুত উঠতে হবে। ঘুম মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে, শরীরে সতেজতা ফিরিয়ে আনে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম মানুষের ফুসফুস ভালো রাখে। তাই আমাদের উচিৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো।

লেখক: শিক্ষার্থী,
ঢাকা কলেজ, ইতিহাস বিভাগ (২০২০-২১)।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //