সুখবরের অপেক্ষায় বেসরকারি শিক্ষকরা

৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’। অন্যান্য বছর গতানুগতিকভাবে দিবসটি উদযাপন হলেও এবছর সেটিকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে বেসরকারি শিক্ষকদের। কারণ গত ১১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২১ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। তবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে জাতীয়করণের বিষয়টি জটিল ও সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে আপাতত বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধাদি বাড়ানোর আশ্বাস দেয়া হলে তারা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন। ফলে ৫ অক্টোবর ‘শিক্ষক দিবসে’ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শতভাগ উৎসব বোনাস, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির সুখবরের আশা করছেন শিক্ষকরা।

এর আগে গত ১১ জুলাই থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) আহ্বানে মাধ্যমিকের শিক্ষকরা টানা ২১ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলন চলাকালে তারা শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সাথেও বৈঠক করেন। তবে সেখানে তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সুরহা না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন। তবে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ারের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে যান শিক্ষক নেতারা। সেখানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক উপকমিটির নেতাদের সাথে বৈঠকের পর শিক্ষক নেতারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় তাদেরকে আশ্বাস দেয়া হয়, এই মুহূর্তে জাতীয়করণের বিষয়টি তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও সরকারি শিক্ষকদের সাথে তাদের বেতন-ভাতার বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। তবে কী কী সুযোগ-সুবিধা তাদের বাড়ানো হবে সেটি ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা আসতে পারে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দুটি শিক্ষাধারা বেসরকারি শিক্ষা হিসেবে চালু আছে। একদিকে সাধারণ শিক্ষা তথা স্কুল-কলেজ ও অপরদিকে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা। উভয় শিক্ষা আজও অবহেলিত, বঞ্চিত এবং উপেক্ষিত। চলমান মুদ্রাস্ফীতিতে সরকারের এমপিও দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা পাঠ্যক্রম সমান হলেও শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধায় রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এসব বৈষম্য নিরসনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও তা আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তবে শেষ পর্যন্ত দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ আন্দোলনের আগে তাদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে ছিল- সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য দূর করা, শতভাগ বোনাস, সম্মানজনক বাড়িভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা নিশ্চিত করা। তবে এসব দাবি মেনে না নেয়ায় ক্রমান্বয়ে জাতীয়করণ আন্দোলনে গড়ায়।

এদিকে জাতীয়করণের বিষয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা এবং সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি। তাদের অভিযোগ, আর্থিক সংকট এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা নয়; সমস্যা সদিচ্ছার। তারা বলছেন, সমস্যা সর্বত্র। যেখানে সংকট আছে সেখানে সমাধানও আছে। তবে সমাধানের জন্য সংকটের মূল কারণ বের করা এবং ওই কারণ দূর করার উপরই সমাধান নির্ভর করে।

প্রসঙ্গত: শিক্ষা ও উন্নয়নর ক্ষেত্র শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন করা হয়। পৃথিবীর সকল দেশের শিক্ষক সমাজের নিকট এ দিনটি অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার। শিক্ষক দিবস পালনের ইতিহাস খুব বেশিদিন আগের নয়। ১৯৯৩ সালে বিশ্বের ১৬৭টি দেশের ২১০টি জাতীয় সংগঠনের প্রায় ৩ কোটি বিশ লক্ষ সদস্যদের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন ‘এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল’ গঠিত হয়। এ আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো কর্তৃক প্রণীত দলিলটি যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার অর্থবহ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ক্রমাগত অনুরোধ ও আহ্বান করে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালনের শুভ সূচনা করা হয়। ১৯৯৪ সালের পর থেকে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

লেখক: ব্যাংকার, সাবেক শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //