চাই ধর্মীয় মূল্যবোধ

অন্যের অধীনে বড় হলে কিংবা সর্বদা জুলুম, নির্যাতন, গঞ্চনা আর মানবাধিকারহীনতা ও কথা বলতে না পারার স্বাধীনতায় যে জাতি বড় হয় তার নিজস্বতা বলতে কিছু থাকে না। আর সেজন্য এই বাঙালি জাতিকে বারবার বিদেশি শক্তির অধীনে থেকে বড় হতে হয়েছে কিংবা এরা যেন কখনো একতাবদ্ধ হতে না পারে বিদেশি প্রভুরা এমন চক্রান্ত বারবার করে সফল হয়েছে। 

যখন শোষণ বঞ্চনা আর গঞ্চনার মধ্য দিয়ে মানুষ বড় হয় তখন তার মধ্যে জন্ম নেয় নিজে (self) বেঁচে থাকার এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই তার মধ্যে জন্ম নেয় আমিত্ব (selfness)। ফলে সে অন্যের কথা বা নিকট জনের কথা না ভেবে কেবল নিজের কথাই ভাবতে থাকে। এমনকি নিজ গ্রামে বসবাস করলেও সেই গ্রামের রাস্তার ইট খুলে নিয়ে নিজের বাড়ির দেয়াল বানাতেও তার মাথায় এই চিন্তা জাগ্রত হয় না যে এতে আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবো। 

আমরা এখনো কাউকে পরিচয় জিজ্ঞেস করতে গিয়ে বলি আপনার দেশের বাড়ি কোথায়? (সংগঠন ও বাঙালি, আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ) অর্থাৎ নিজ গ্রাম, থানা কিংবা জেলায় (পঞ্চায়েত) হল আমাদের দেশ। আর সেজন্যই তো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বিদেশেও গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক সাহায্য প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এমনকি চাকরিতেও বিশেষ সুযোগ দেয়া হয় বিশেষ অঞ্চল বিবেচনায় কিংবা প্রতিষ্ঠানের বড়কর্তার নিজ এলাকার লোক মনে করে। 

আমরা বড় জায়গায় গিয়ে যেন ছোট চিন্তা করতেই দিন দিন অভ্যস্ত হচ্ছি। কোন কাজের জন্য কিংবা সুযোগ-প্রদানের জন্য প্রথমত আমাদের মস্তিষ্কে স্বাভাবিকভাবেই পরিচিতদের মধ্য থেকে কারো না কারো নাম মাথায় উঁকি দিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে এরকম চিন্তায় বা স্থুলতায় নিজেকে সিল মেরে রাখাটা নিঃসন্দেহে নিচুতার পরিচয়ক। যা একটি জাতির বড় হওয়াকে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং চিন্তাকে ক্রমশ সঙ্কীর্ণ করে দেয়। যে জাতি রাস্তার ইট তুলে এনে নিজ বাড়ির দেয়াল বানায় সে জাতির মস্তিষ্কে কি পরিমাণ স্থুলতা বিরাজমান তা নিয়ে কেউ পিএইচডি ডিগ্রি করলে নিশ্চয়ই তা কোন ইউনিক কাজ বলে বিবেচিত হতে পারে।

আমাদের মধ্যে এই যে আমিত্ব,সংকীর্ণতা,স্থুলতা,আঞ্চলিকতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে তা বড়ই দুঃখজনক। আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে বরং শেখানো হয় এরকম স্বজনপ্রীতি ও প্রতারণা পূর্ণ আচরণের। মিস্টার এক্স বেড়াতে গিয়েছিলেন ইতালির ভেনিসে। সেখানে সানগ্লাস কিনতে গিয়ে দেখা হয় এক বাংলাদেশি দোকানদারের সাথে। ফলে তিনি সানগ্লাসের দাম বিশ ইউরোর বদলে মাত্র ৫ ইউরো রাখেন। কিংবা একটি বানর বিচারকের আসনে বসে কিভাবে দুইজন বিচার প্রত্যাশীকেই ঠকায় সেরকম গল্প। একটি ছোট শিশুর মস্তিষ্কে অবচেতন মনেই (subconscious mind) ঢুকিয়ে দেওয়া হয় কিভাবে অন্যকে ঠকানো যায় কিংবা অন্যকে ঠকিয়ে নিজে প্রতিপত্তি অর্জন করা যায়,বেশি খাওয়া যায় ইত্যাদি। 

ছোটকাল থেকেই শেখানো হয় না নীতি-নৈতিকতা ও তার উপর একটি জাতি কিভাবে আস্তে আস্তে ক্রমশ বড় হয়ে উঠতে পারে তার প্রাসঙ্গিকতা। মানুষ ছোট হতে চাইলে মুহুর্তেই ছোট হয়ে যেতে পারে। এমনকি মাত্র একটি কর্মের দ্বারাও ছোট হয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু বড় হতে চাইলে দরকার সাধনা,দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও বাসনা এবং ছোট ছোট মহৎ কর্ম।

দ্রুত বড় হয়ে যাওয়ার বাসনা মানুষকে দ্রুতই নিস্তেজ করে ফেলে। আর এরকম বাসনা যখন জাতির সবার মধ্য বিরাজ করে তখন জাতি ধপ করে নিচে পড়ে যায়। তাকে টেনেও তোলা যায় না। তখন প্রয়োজন পড়ে হোমিও চিকিৎসার। শিক্ষার মানোন্নয়নের, নৈতিকতার প্রসারের, ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তৃতির। কারণ ধর্মহীনতায় কোন জাতি বড় হতে পারে,উঁচু শিখরে পৌঁছাতে পারে কিন্তু বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। বরং কচ্ছপ গতিতে উচ্চ আসনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার ছোট ছোট নৈতিক কাজের প্রসারের, শিক্ষার সিলেবাসের মধ্য সকল প্রকার নৈতিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্তির। তবেই সম্ভব সৎ,দক্ষ, যোগ্য ও নেতৃত্বপূর্ণ জাতি গঠন।


লেখক- শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //