ক্যালেন্ডার বদলালে কি সব বদলে যায়

ক্যালেন্ডারের পাতা বদলালে কি সব  বদলে যায়? নতুন বছরকে স্বাগতম জানালে তো পুরাতন কে আর ভুলে থাকা যায় না। চোখ বুজে সকলে অতীতের পাতা, ছাঁকবে নিরালায় বসে। সময়ের স্রোতে ভেসে ক্ষণিকের আশ্রয়ে আমাদের জীবনে কতকিছু ঘটে যায়। সময়ের জালে আবদ্ধ হয়ে কিছু সাফল্য আছে,আবার কিছু ব্যর্থতা জীবনের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িয়ে যায়। সময়ের সাথে নক্ষত্রের রাতও একসময় শেষ হয় যায়।

প্রখরদীপ্ত রবিও পশ্চিমে হেলে পড়ে। ভরাযৌবনা নদীও একসময় শুকিয়ে যায়। হতাশ কিংবা ক্ষণিকের আনন্দকে পাশ কাটিয়ে আবার আমাদের ব্যস্ততায় ফিরতে হয়।

সময়ের স্রোতে ভেসে জীবনে আমাদের অনেককিছু আয়ত্তে করে ফেলতে হয়। সময়ের পরিক্রমায় সবগুলো যেন এলোমেলো হয়ে আছে। যে দেহ সমুদ্রের সলীল বাতাসে মন খুলে হেসে বেড়াতো তা যেন আজ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রমে। যে মন লজিকের প্রফেসর মেনে চলতে চায় না, মুক্ত বিহঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। সেই মনটা যেন আজ নিঃস্তব্দ।

কত মানুষের সাথে মিশি আমরা, কত কিছু শিখি। তা বলে শেষ করা যায় না। মানুষের সাথে মিশলে বুঝা যায় তাদের মনটা কত নিখুঁত কিংবা বিষে ভরা। বিষে ভরা লোকগুলো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে সামনে এসে- আড়ষ্ট জিভে সব কথা জড়িয়ে ফেলার ভান করে কতশত বিশ্বাস অর্জন করে ফেলে। স্বার্থ হাসিল করে রেখে যায় আমাদের  মরুভূমিতে, চারদিকে বালুকা—আশপাশ জুড়ে শুধু শূন্যতা আর সম্মুখে মরীচিকা। চিন্তার সাগরে ডুব দিয়ে কোথায় যেন তলিয়ে যায় এমন মানুষের আচরণ দেখে। মনের মাঝে তখন রাবণের চিতা জ্বলে উঠে। এইসব মানুষের জীবনের বিচিত্র অধ্যায় সবগুলো ভাষা দিয়ে লেখা যায় না।

জীবনের অর্ধেকটা পথ হেটে এসে দেখি সম্মুখে কেউ নেই, আশেপাশে বা পিছনেও কেউ নেই! নতুন বছরে প্রত্যাশা থাকবে তাদের অন্তর হোক নির্মল, সুন্দর, কলুষমুক্ত।

আমাদের জীবনের রুক্ষ প্রান্তরে পরিবারের স্রোতস্বীনী ধারা আমাদের বারংবার ধন্য করে তোলে। আমাদের গায়ে আঁচড় লাগলে,পরিবারে পাজরের একটা হাড় যেন ভেঙে যায়। সময়ের কি এক অদ্ভুত আচরণ আমাদের সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কেউ  ঘড়ির কাটাঁ থামালো না, সময়ের বেড়াজালে নাড়ির গতি থেকে দূরে চলে যেতে হলো। 

নতুন বছরে শুরুতে আত্মার সাথে জড়ানো বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে সরে যেত হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। দিনের একটা নিদিষ্ট অংশ যাদের সাথে ঘুরে বেড়াতাম সমুদ্রের তীরে কিংবা শহরের সোডিয়ামের আলোতে। তাদেরকে আজ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যও খুঁজে পাওয়া যায় না। বাস্তবতার সাথে  একাকার হয়ে বন্ধুরা সব চলে গেছে বহুদূর, নক্ষত্ররাজির ভিড়ে, ফেরবার কোনো সাধ্যি নেই। আজ বন্ধুদের ছাড়া আমরা আছি অনেকের মাঝে;তবুও কেমন এক একাকীত্বের বিষণ্ণতা ঘিরে আছে আমাদের। চারপাশের কোলাহল কেমন মৃয়মান, আমেজহীন। উদাসীনতা অনুভূতিকে ভোতা করে ফেলেছে। খরার তাপদাহে ভষ্ম মরুর বালুরাশির মত হু হু করছে এক শূণ্যতা। বন্ধুদের সাথে পেছনে ফেলে এসেছি কতরকম ধূসর গোধূলি। নতুন দিনে বন্ধুদের সাথে আবারো সাক্ষাৎ হোক সোনালী এক মুহূর্তের সাথে সেই প্রত্যাশাটা রইল।

২০২৩ সালের সূর্যটা এই বিদায় নিল। এখন সূর্যের সেই তেজ আর নেই, শুধু বিদায়ের আগে বেদনার শেষ আঁচড়টুকু বসিয়েছে পশ্চিম আকাশে। লালিমাটুকু লেপ্টে আছে বিমর্ষ বিদায়ের সাক্ষ্য হয়ে। প্রকৃতি ফ্যাকাশে হয়ে উঠেছে; চারদিকে এক নীরব বিষণ্ণতা। নতুন বছরের শুরুতে সকলের মনে যেন ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে। সময়ের সাথে সবাই রূপ বদলায়, পালাবদল হয় সময়ের। সবকিছুর পরিবর্তন ঘটুক তবে আমাদের নৈতিকতার যেন উন্নতি সাধন হয়।

আমরা একা কিংবা একগুচ্ছ সকলে নতুন সূর্য উদ্ভাসিত হবার খানিকটা আগেই, পরস্পরকে অভিবাদন জানাই। আমরা শান্তি কামনা করি পরস্পরের। অশান্তির পৃথিবীর সাথে চিরকালীন চুক্তি করার পরও হাড়ভাঙা খাটুনি করা শ্রমিকের যেন বিশুদ্ধ আহার জুটে। নতুন বছরে যেন পত্রিকার পাতায় ভর করে বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ আমাদের নাকে না আসে। প্রতিবেশি কিংবা স্বজনের বাড়িতে মাঝরাতে গুম হওয়া তরতাজা ছেলেটি যেন নীড়ে ফিরে আসে। আমরা রক্তাক্ত তরুণদের লাশ পাশে রেখে যে নেতা নির্বাচন করি তা যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। আসুন আমরা অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখি-
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে যাচ্ছে যাক তাতে আমার কি।
বরং আমি আমরা দূর থেকে দেখি নিজে ও নিজেরা নিরাপদে থাকি
এই চিন্তার অবসান ঘটিয়ে নতুন পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে ঝাপিয়ে পড়ি। 

-জাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //