ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০০ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০৭ এএম
ভেগান ডায়েট। প্রতীকী ছবি
কট্টর নিরামিষভোজী বা ভেগানদের ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিলেও বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোকের ঝুঁকি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণাটি, ১৮ বছর ধরে ৪৮ হাজার মানুষের উপর পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে নিরামিষভোজীদের মধ্যে করোনারি হৃদরোগীর সংখ্যা মাংসাশীদের তুলনায় ১০ জন করে কম পাওয়া গেছে। কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা তিনজন করে বেশি পাওয়া গেছে।
ডায়েট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাস যেমনই হোক না কেন, বিভিন্ন ধরণের বৈচিত্র্যময় খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো।
এপিক-অক্সফোর্ড স্টাডি মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রকল্প। তারা এই গবেষণায় দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে তাদের তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে।
১৯৯৩ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকই ছিলেন মাংসাশী। ১৬ হাজারের কিছু বেশি ছিলেন নিরামিষভোজী। আর সাড়ে সাত হাজার অংশগ্রহণকারী জানান, তারা মাছ খেতেন।
অংশগ্রহণের সময় ও ২০১০ সালে আবার নতুন করে এসব অংশগ্রহণকারীদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য, ধূমপান ও শারীরিক কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলোও আমলে নেয়া হয়েছিলো।
সব মিলিয়ে, করোনারি হৃদরোগ বা সিএইচডির সংখ্যা মেলে ২৮২০টি, স্ট্রোকের সংখ্যা ১০৭২টি, যার মধ্যে ৩০০টি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ জনিত স্ট্রোকের ঘটনাও রয়েছে। মস্তিষ্কের দুর্বল শিরা ছিড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে এ ধরণের স্ট্রোক হয়।
মাংসাশীদের তুলনায় মাছ ভোজীদের মধ্যে সিএইচডি'র ঝুঁকি ১৩ ভাগ কম ছিল। আর নিরামিষভোজীদের মধ্যে এই হার ২২ভাগ কম ছিল। কিন্তু যারা উদ্ভিদ ও শাক সবজি খেয়ে জীবন ধারণ করেন বা যারা ভেগান, তাদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০ ভাগ বেশি ছিলো।
গবেষকদের ধারণা, ভিটামিন বি১২ এর অভাবের কারণে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে তারা বলেন, এর প্রকৃত কারণ খুঁজে পেতে হলে আরো গবেষণার দরকার রয়েছে। এমনো হতে পারে যে, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে আসলে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বরং যারা মাংস খায় না তাদের জীবনের অন্যান্য কারণের জন্যই হয়তো এই ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
তার মানে কি নিরামিষভোজী অস্বাস্থ্যকর? ব্রিটিশ ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের ডা. ফ্রাঙ্কি ফিলিপস বলেন, ‘এটা নাও হতে পারে। কারণ এই গবেষণাটি শুধুমাত্র একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা মাত্র। তারা শুধু পর্যবেক্ষণ করেছে যে মানুষ কি খায় ও তাদেরকে বছরের পর বছর ধরে অনুসরণ করেছে, এটা শুধু সম্পৃক্ততাই জানান দেয়। কারণ বা প্রভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে না।’
তিনি বলেন, সবার জন্য বার্তা হলো, সবচেয়ে ভালো হচ্ছে একটি পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস ও বিভিন্ন ধরণের খাবার খাওয়া।
ব্রিটিশ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ‘ইট ওয়েল গাইড’ নামে খাবার সম্পর্কিত একটি নির্দেশিকা দিয়েছে। আপনি যে ধরণের খাবারই খান না কেন, আপনার থালায় এ ধরণের খাবার থাকাটা জরুরি বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে...
১. দিনে কমপক্ষে ৫ ভাগ ফল ও শাক-সবজি খান
২. মূল খাবার হিসেবে উচ্চ মাত্রায় আঁশ সম্পন্ন ও শ্বেতসার বহুল খাবার যেমন আলু, রুটি, ভাত কিংবা পাস্তা রাখা উচিত
৩. প্রোটিন ভুলে গেলে হবে না- চর্বিহীন মাংস, মাছ, সামুদ্রিক খাবার, ডাল, টফু কিংবা লবণহীন বাদাম খেতে হবে
৪. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার থাকতে হবে
৫. উচ্চ মাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার, চিনি কিংবা লবণ যত কমানো যায় ততই ভালো
কিন্তু যারা ভেগান তাদের নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি গ্রহণ সম্পর্কে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যারা মাংস, দুগ্ধজাত খাবার ও মাছ খান তারা পর্যাপ্ত ভিটামিন বি১২ পান, যা স্বাস্থ্যকর রক্ত ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয়। যদিও সকালের নাস্তার বিভিন্ন সিরিয়াল ও ইস্ট সমৃদ্ধ খাবারে ভিটামিন বি১২ থাকে তবু ভেগানদের মধ্যে এই ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে।
উদ্ভিদ-জাত খাবার থেকে আয়রনও কম পাওয়া যায়। তাই যারা মাংস খান না তাই তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে তারা যাতে নিয়মিত গমের রুটি, আটা, শুকনো ফল ও ডাল খান। এছাড়া গত মাসে ভেগানদের আহ্বান জানানো হয়েছিল, তারা যেন মস্তিষ্কের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন কোলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন। -বিবিসি
ABOUT CONTACT ARCHIVE TERMS POLICY ADVERTISEMENT
প্রধান সম্পাদক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ | প্রকাশক: নাহিদা আকতার জাহেদী
প্রধান সম্পাদক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ
প্রকাশক: নাহিদা আকতার জাহেদী
অনলাইন সম্পাদক: আরশাদ সিদ্দিকী
অনলাইন সম্পাদক: আরশাদ সিদ্দিকী | ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
© 2021 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh