বাড়িতে বসে অফিস

ঘরে বসে থাকা এবং সামাজিক দূরত্বই করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র পন্থা। ‘বাড়িতে বসে অফিস’ এটি অনেকের জন্য স্বাভাবিকভাবেই নতুন ধারণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই প্রথমবারের মতো এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখে পড়বেন বললেও ভুল হবে না।

বাড়িতে বসে কাজ করে কীভাবে উৎপাদনশীলতা ধরে রাখা যায়, সেই বিষয়টি এখন খেয়াল রাখা জরুরি। এ কাজের জন্য বাড়িতেই তৈরি করতে হবে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ। করোনাভাইরাসের কারণে কর্মীকে কতক্ষণ বাড়িতে থাকতে হবে, তা পরিষ্কার নয় বলে বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করছে। অফিসের পরিবেশ থেকে হঠাৎ ভিন্ন পরিবেশে কিছু নিয়ম মেনে বাড়িতে বসেও কাজ শুরু করতে পারেন।

বাড়িতে ছোট অফিসের জন্য আলাদা জায়গা থাকলে তো ভালোই, তবে তা যদি সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে খাবার ঘরের একদিকে অথবা বারান্দার মাঝে করা যেতে পারে এই হোম অফিসের আয়োজন।

হোম অফিসের অন্দরসজ্জায় যে জিনিসটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো টেবিল। তবে টেবিলটির আকার কেমন হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে কাজের ধরনের ওপর। সাধারণত টেবিলের আকৃতিটা অন্তত দুই বাই তিন ফুট হলে ভালো। টেবিলে রাখতে পারেন ইনডোর প্ল্যান্ট। যে ঘর কাজের জন্য বেছে নিচ্ছেন, সেখানে যেন বড় জানালা থাকে। কাজ করতে যাতে ভালো লাগে, বাড়ির নির্দিষ্ট কোনো ঘরকে সেভাবেই বানানো উচিত।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখতে টেবিলের একদিকে বানাতে পারেন ওয়াল কেবিনেট বুকশেলফ। চাইলে টেবিলের ওপরের দেয়ালকেও কাজে লাগাতে পারেন। কাজের টেবিলটির এক কোণে রাখতে পারেন টেবিল ল্যাম্প। এ ছাড়াও কাজের প্রয়োজনে পরিবারের কেউ এলে বসার জন্য ছোট সোফা ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেহেতু অফিসটা ঘরের ভেতর তাই আসবাব থেকে শুরু করে সবকিছুতেই একটু উজ্জ্বল রঙের পরশ থাকা ভালো, যেন ঘরের ভেতর অফিস হওয়ার কারণে ঘরের নান্দনিক ছন্দটা না হারিয়ে যায়। অফিসের রিভলবিং চেয়ারের বদলে বাড়িতে কাঠের চেয়ারে বসুন। আপনার কোমর ভালো থাকবে। টেবিলে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার রেখেই কাজ করুন। অর্থাৎ ওই চেয়ার টেবিলে বসলেই আপনার মধ্যে যেন কাজ করার মানসিকতা চলে আসে।

আপনার অফিসের বস এবং যাদের সঙ্গে কাজ করেন, যোগাযোগ রাখার জন্য সে কারণেই কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যেন বাড়িতে বসে কাজের ক্ষেত্রেও তেমনটা হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্যাড, মোবাইল, ইন্টারনেট সংযোগ সব সময় একটিভ রাখুন। যাতে আপনার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অফিসের মতোই থাকে। ই-মেইল, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপ সবসময় চেক করবেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইনফরমেশন যেন মিস না হয়ে যায়।

বাড়িতে কাজ করার সময় এক ঘণ্টা অন্তত ছোট বিরতি নিয়ে পরিবারকে সময় দিন। অল্প হাঁটাহাঁটি করুন। বাসায় আছেন বলে যে শুয়ে-বসে সময় কাটাবেন, তা কিন্তু ভুলেও করবেন না। বাড়িতে বসে কাজের দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একাকিত্ব। কর্মী একাকী বোধ করলে তখন তার উৎসাহ কমে যায় এবং ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।

বাড়ির মধ্যে এমন সীমানা তৈরি করুন, যা আপনার পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারে। যখন দরজা বন্ধ করে দেবেন মনে করুন, আপনি সেখানে নেই। অফিসে বসেই কাজ করছেন। বাড়িতে বসে কাজের ক্ষেত্রেও ২০ মিনিটের জন্য সকালে কফি খাওয়ার জন্য বা বিকেলে কিছুক্ষণ ব্যায়ামের জন্য কাজের বাইরে থাকতে পারেন।

পরিশেষে বলা যায়, বাসায় বসে কাজ করার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সুবিধা হলো আপনি বাসায় বসে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছেন। আবার চ্যালেঞ্জ হলো পরিবারের সঙ্গে থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে কাজ করাটাও কিন্তু কঠিন। তবে এই সংকটময় মুহূর্তে সব চিন্তা-ভাবনা দূরে রেখে অফিসের কথা চিন্তা করে কাজ করার মনোভাব নিয়ে বাসায় গড়ে তুলুন আপনার কাজের পরিবেশ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //