সিঙ্গেল পুরুষের ঘরবন্দি জীবন

সিঙ্গেল পুরুষ জীবনটাই একটু অন্যরকম। পড়াশোনা, অফিস কিংবা কাজে বাইরে থাকা এবং সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা মানুষগুলো হঠাৎ এক মাস ধরে ঘরবন্দি হয়ে আছেন লকডাউনের কারণে। সিঙ্গেল পুরুষ যারা আছেন, এখন সময়টাকে কীভাবে কাটাচ্ছেন তারা এবং এই সময়ে তাদের মানসিক অবস্থা কেমন?

লেখায় যাদের নাম বলা হয়েছে এগুলো ছদ্ম নাম। তারা প্রত্যেকেই সিঙ্গেল কিংবা ব্যাচেলর। ঘরবন্দি থেকে সারাদিন ইন্টারনেটে হয়তো ব্যস্ত রাখছেন নিজেকে। অনেকের মাঝে রয়েছে হাহাকার, কাজ না থাকার ভয়, আগামী দিনের দুশ্চিন্তা, একঘেয়েমি বিরক্তি এবং একা থাকার হতাশা। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে আমরা একটি সার্ভে করি। যাতে উঠে আসে আমাদের সিঙ্গেল পুরুষদের জীবনযাপন। 

সীমান্ত রোজারিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। লকডাউনের কারণে এখন ক্লাস, আড্ডা, হ্যাং আউট সব বন্ধ। যৌথ পারিবারের ছেলে সারাদিন অনলাইনে থাকেন, মুভি দেখা, ভিডিও গেমস, ইউটিউব থেকে বিভিন্ন বিষয় শিখছেন। বড় বোনের পরামর্শে কিছু নতুন বই পড়ছেন, যা তাকে নতুন চিন্তার খোরাক দিচ্ছে। এনজয় করছেন লকডাউন। তবে করোনা আক্রান্তের ভয় তাকে তাড়া করছে প্রতিটি মুহূর্তে। 

প্রদীপ বিশ্বাস। চাকরিপ্রত্যাশী। বিসিএস পরীক্ষার কোচিং, টং দোকানের চা খাওয়া, একমাত্র উপার্জনমাধ্যম টিউশনি সব বন্ধ। কয়েকজন বন্ধুরা মিলে থাকেন রাজা বাজারের এক ফ্ল্যাটে। ঘরবন্দি জীবনে থেকে মানছেন করোনা থেকে বাঁচার সব নিয়ম কানুন। বুয়াকে ছুটি দিয়ে রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা সব করছেন তারা মিলেমিশে। তারা খেয়াল করলেন নিজেরা রান্না করলে, কাজ করলে অনেক খরচ কমে যায়। সেই সঙ্গে বুয়ার বেতন বেঁচে যায়। জীবন থেকে পিছিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কাজ করছে তাদের মনে। রুমমেটদের সঙ্গে মনমালিন্য হয় আবার এক সঙ্গে গানও করেন ঘরবন্দি জীবনটাকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য। 

একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন সিং মং চাকমা। বাড্ডায় থাকেন বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে। ক্যারিয়ার নিয়ে তার উচ্চাশা অনেক। তাই ঘরবন্দি জীবনটাকে তিনি বেছে নিয়েছেন অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কোর্স করে। এর ফাঁকে শিশু ভাতিজিকে নিয়ে খেলা করেন। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটে তার। তার ভাবনায় এখন কেবল ক্যারিয়ার। কোনো অভিযোগ নেই সিঙ্গেল জীবন নিয়ে। 

সূর্য শুভ। তরুণ সিনেম্যাটোগ্রাফার। সব কাজ বন্ধ। ছোট বোন, বাবা-মাকে নিয়ে তার পরিবার। ঘরবন্দিজীবনে প্রতিদিন হতাশা বাড়ছে। কাজ না থাকলে জীবন চলবে কীভাবে? হতাশা কাটাতে বেশ কয়েকটা বই পড়েছেন তিনি; কিন্তু হতাশা যে কাটতেই চায় না। রাতেও ঘুম আসে না ঠিকমতো তার। ঢাকার বাইরে সরকারি চাকরি করে মো. রাফি। ছেলের বিয়ের জন্য বাবা মা পাত্রী দেখছেন। ঘরবন্দি থাকায় তার মনে হচ্ছে এখন বিয়ে করলে সময়টাকে আরও উপভোগ্য করে তোলা যেত। 

এসব ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে আমরা যে বিষয়টি খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছি তা হচ্ছে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ কৌশল এবং নৈতিক জীবনধারা। তাদের কেউ কেউ হতাশায় পড়েছেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, চাকরির উন্নতি নিয়েই কারও একমাত্র লক্ষ্য, আবার আরেকজন স্বপ্ন দেখছেন নতুন জীবন গড়ার। 

কাজের ব্যস্ততা মানুষকে অনেক কিছু থেকে দূরে রাখে। ব্যস্ততা সত্ত্বেও নিজেকে সময় দেওয়া উচিত। একটু অবসরে ভালো গান শোনা, বইপড়া, নিজের অন্য কোনো শখের যতœ করাটা খুবই জরুরি। পরিবারকে সময় দেওয়া উচিত। শিশুদের সঙ্গে এবং বয়স্কদের সঙ্গেও সময় কাটান, জীবন উপভোগ্য হয়ে উঠবে। 

পর্নোগ্রাফি কমবেশি সব সিঙ্গেল পুরুষই দেখেন। তবে এটা নেশা হলেই সমস্যা। যে কোনো আসক্তি মানুষের জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনবে। সারাদিন একটা ছেলের চোখে অনেক কিছুই পড়ে; কিন্তু সব ছাপিয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই সিঙ্গেল পুরুষের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। 

সবশেষে বলব যে কোনো বিষয়ে হতাশ না হয়ে এ সময়টাতে সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে সবাইকে। সব ধরনের হতাশার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজের জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন। ঘরবন্দি জীবনে সিঙ্গেল পুরুষের জীবন হয়ে উঠুক সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //