সমুদ্র দর্শনে প্যারাসেইলিংয়ে সতর্কতা

দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে অবকাশযাপনের পছন্দের জায়গা সম্পর্কে জানতে চাইলে একটি বড় অংশের উত্তর হবে- কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। যারা একটু সমুদ্রের হাওয়া খেয়ে আরাম করে সময় কাটাতে চান, তাদের কাছে বিশ্বের এই সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত অদ্বিতীয়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা কিছু দিন আগেও পাহাড়, হাওর-বাঁওড়, দুর্গম ঝর্ণাকেই প্রাধান্য দিতেন। তবে ইদানীং তারাও অবকাশযাপনে কক্সবাজার যাচ্ছেন। তাদের আকৃষ্ট করছে ‘প্যারাসেইলিং’।

সৈকতে বসে কিংবা সমুদ্রের কোলঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় থেকে নানা প্রহরে সমুদ্রের রূপ আমরা উপভোগ করি; কিন্তু সমুদ্রের এই সৌন্দর্য নতুন এক মাত্রায় উপভোগ করা যাবে প্যারাসেইলিংয়ের মাধ্যমে। ঠিক পাখির মতো আকাশে উড়ে দেখতে পাবেন পাহাড় আর সমুদ্র। একটি স্পিডবোটে প্যারাসেইল বাঁধা থাকে এবং এর সঙ্গে আরোহীদের একটি শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। স্পিডবোট আরোহীকে টেনে নিয়ে যায় সমুদ্রে, আর সেই গতিতে আরোহী উড়তে থাকেন ঠিক পাখির মতোই।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে সৈকতের হিমছড়ি দরিয়ানগর পয়েন্টে মেরিন ড্রাইভের দক্ষিণ পাশে সৈকতে প্যারাসেইলিংয়ের সুযোগ আছে। এর জন্য জনপ্রতি খরচ করতে হবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই খরচে আপনি ৫ থেকে ১২ মিনিট পর্যন্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে পারবেন। মাটি থেকে ৩০০-৫০০ ফুট উঁচুতে উড়তে উড়তে দেখতে পাবেন, সমুদ্র আর পাহাড়ের এক নতুন রূপ। প্রতি বছর হাজারও মানুষ কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই প্যারাসেইল করছেন। তবে কখনো কখনো বিপর্যয় ঘটে। মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া থেকে শুরু করে ডুবে যাওয়ার মতো গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে প্যারাসেইলিংয়ের সময়। আনন্দ ভ্রমণে এ ধরনের অনাকাক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে প্যারাসেইলিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-

এমন একটি প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হবে, যারা এর সরঞ্জাম সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং যাদের অপারেটর দক্ষ, সেসব প্রতিষ্ঠানই বেছে নেবেন। আর যারা সাইলিংয়ের আরোহীদের প্রশিক্ষণও দেবেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্ড সই করে প্যারাসেইলিং করতে হয়। কাজেই জেনে এবং নিশ্চিত হয়ে নিন যে, প্রতিষ্ঠানটি আপনাকে প্যারাসেইলিংয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সব তথ্য দিচ্ছে কি-না। অবশ্যই আকাশে ওড়ার ভীতি থাকলে বন্ডে সই করবেন না।

প্যারাসেইলিংয়ের আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিন। যদি পূর্বাভাসে প্রবল বাতাস, বৃষ্টি, বজ্রপাত বা অন্যান্য খারাপ পূর্বাভাস থাকে, তাহলে প্যারাসেইলিং করবেন না। এমনকি যদি প্যারসেইলিং প্রতিষ্ঠান আপনাকে নিরাপদ বলে নিশ্চয়তাও দেয়, তবুও না। জোয়ারের সময় প্যারাসেইলিং করবেন না। কেননা জোয়ারের সময় স্পিডবোট অনেক সময় ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। এতে বোটের ইঞ্জিন থেমে গিয়ে প্যারাসুটসহ আপনি সাগরে পড়ে যেতে পারেন।

যদিও প্যারাসেইলিং কোম্পানি নিরাপত্তার জন্য দায়ী। তবুও স্পিডবোট ও সব প্যারাসেইলিং সরঞ্জাম যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। প্যারাসুটটি শুকনো আছে কি-না, তা যাচাই করে নেবেন। ভেজা প্যারাসুট দিয়ে প্যারাসেইলিং করার সময় ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। আর অবশ্যই দড়ি যাচাই করে নিতে ভুলবেন না। স্পিডবোটে পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল আছে কি-না জেনে নিন। কেননা মাঝপথে তেল ফুরিয়ে গেলে আপনাকে সমুদ্রে পড়তে হবে।

যদি কোনো কারণে প্যারাসুট নিয়ে সমুদ্রে পড়ে যান, সে ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। কারণ প্যারাসেইলিংয়ের কর্মীরা আপনাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসবেন। আপনি যদি সাঁতার না জানেন, তাহলে দু’হাত উঁচু করে সংকেত দেবেন। আর যদি আপনার সাঁতার জানা থাকে, তাহলে লক্ষ্য রাখবেন প্যারাসুটের দড়ি যেন পায়ে না পেঁচিয়ে যায়।

প্যারাসেইলিংয়ের আগে লাইফ জ্যাকেট ভালোভাবে পরে নিতে হবে। এতে করে আপনি পানিতে ভেসে থাকতে পারবেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //