শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

এসময়ের মায়েদের বড় দুশ্চিন্তা হলো, সন্তান কিছুই খেতে চায় না। তবে এটি নেহাতই কথার কথা। সন্তান ঠিকই খেতে চায় কিন্তু সেটা জাঙ্ক ফুড। বাসার তৈরি ডাল, মাছ, ভাত, সবজিতে অ্যালার্জি; কিন্তু বার্গার, চিপস, পিৎজা বা কোমল পানীয় দেখলে একগাল হাসি।

সারা দিনই জাঙ্ক ফুড খেয়ে অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারে তারা। মা-বাবাও সন্তানের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে থাকেন। যেমন- এক প্যাকেট চিপস দিলেই হোমওয়ার্ক করতে বসে যায় সন্তান। আবার ক্লাস টেস্টে প্রথম হয়েছে, পুরস্কার হিসেবে কিং সাইজ পিৎজা। আর এর ফলে সন্তানের শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। আক্রান্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন অসুখে; যেমন ওবিসিটি বা জুভেনাইল ডায়াবেটিসে। তবে এ ক্ষেত্রে দোষ কিন্তু শুধু সন্তানের নয়। একটু গভীরে গেলেই বোঝা যাবে মা-বাবারও কিছুটা ভূমিকা থেকে যায়। কিন্তু এর সমাধান কোথায়?

এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পুষ্টিবিদ আনোয়ারা বেগম জানান, একমাত্র সমাধান হেলদি ইটিং হ্যাবিট। যা মা-বাবা ছেলেবেলা থেকেই সন্তানের মধ্যে গভীরভাবে গেঁথে দিতে পারেন। এর জন্য অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে নিজেদের খাদ্যাভ্যাসে। কারণ মা-বাবার চেয়ে বড় রোল মডেল সন্তানের কাছে আর কিছু নেই। 

তিনি বলেন, বাসাতেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করুন। ছেলেবেলা থেকেই সন্তানকে খাবারের ব্যাপারে সচেতন করে তুলুন। কোন খাবারটা স্বাস্থ্যকর আর কোনটা নয় তা যেন দেখেই বুঝতে পারে। তবে এর প্রথম ধাপ কিন্তু নিজেদের সচেতন হওয়া। বাসায় জাঙ্ক ফুড নিয়ে আসা এবং খাওয়া বন্ধ করে দিন। চিপস, চকোলেট, কোল্ড ড্রিংক বাসায় জমা করে রাখবেন না। এর বদলে ফ্রিজে রাখুন ফল, যাতে খিদে পেলেই হাতের কাছে ফলটা পায়। ডাইনিং টেবিলের উপরে বাস্কেটে ফল রাখুন। ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চে রেডিমেড বা সেমি কুকড খাবার খাবেন না, বাসায় তৈরি খাবারই খাবেন। 

তিনি আরও বলেন, সন্তান একটু বড় হলেই রান্নাতেও সাহায্য করতে শেখান। প্রথমেই ওকে দিয়ে সহজ কাজগুলো করান। আপনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে সে নিজেও গর্ববোধ করবে। আর কিশোরদের চা ও কেক বানানো বা সালাদ সাজানো শেখান। রান্না করার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

রান্নার বিষয় সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন। দেখবেন সে নিজে নিজেই অনেক কিছু শিখে যাচ্ছে। এতে বাসায় রান্না করা খাবারের প্রতি ওর আগ্রহ বাড়বে। আর স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যেও পার্থক্য করতে পারবে। যেসব শিশু সবে স্কুলে যাচ্ছে বা যাবে তাদের কাছে খাবার টেবিলটাই একটা মজার স্কুল হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন খাবার চেনা, রং, গন্ধ, স্বাদ চেনার সহজ পাঠ। 

হেলদি ডায়েট প্ল্যান 

বাড়ন্ত সন্তানের জন্য একটি হেলদি ডায়েট প্ল্যান সব মা-বাবারই জানা উচিত। যাতে প্রতিবারের খাবারে যথাযথ ব্যালেন্স থাকে। আর সব ধরনের খাবার থাকলে সন্তান খেয়েও আনন্দ পাবে। 

ফ্যাট: শিশুদের জন্য দরকার ওমেগা ৩ এবং ওমেগা ৬ জাতীয় ফ্যাট। ওমেগা ৩ রয়েছে ইলিশ, টুনা, স্যামন, ম্যাকারেল ইত্যাদি তৈলাক্ত মাছে। এছাড়া তিলের বীজ, সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, ঘি, নারকেল ও বাদামও ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ। ওমেগা ৬ রয়েছে সূর্যমুখীর বীজ, ভুট্টা, আমন্ড ও অ্যাভাকাডোর মধ্যে। 

প্রোটিন: শিশুদের ডায়েটে প্রোটিন অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপরে চাপ সৃষ্টি করে। বাদাম, বীজ, মাছ, ডাল, দুধ, ডিম, পনির, মুরগির মধ্যে ভালো মানের প্রোটিন রয়েছে। 

কার্বোহাইড্রেট: শিশুর ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কার্বোহাইড্রেট। শিশুরা বেশিরভাগ সময় মিষ্টি জুস. ক্যান্ডি, স্ন্যাকস থেকে প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে। এগুলো শুধু অস্বাস্থ্যকর নয়, এ ধরনের কার্বোহাইড্রেটের গুণগত মানও ভালো নয়। ভালো মানের কার্বোহাইড্রেট রয়েছে ফল, সবজি, হাতে বানানো রুটি, বাদামি চাল ও পাস্তার মধ্যে। 

ফল ও সবজি: ফল ও সবজিতে উপস্থিত ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি বিভিন্ন মৌসুমি রোগ থেকে রক্ষা করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //