ঘরে বনসাইয়ের যত্ন

শক্ত কাণ্ডবিশিষ্ট গাছকে খর্বাকৃতি করার শিল্পকে বলা হয় বনসাই শিল্প। প্রাচীন চীনা শব্দ ‘পেনজাই’ থেকে জাপানি ‘বনসাই’ শব্দের উৎপত্তি। বনসাই করতে ব্যবহৃত ট্রের মতো যে পাত্র ব্যবহার করা হয় তাকেই সাধারণভাবে ‘বন’ বলা হয়। যেহেতু এই গাছগুলো অন্যান্য গাছ থেকে কিছুটা নমনীয় তাই এদের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। 

সঠিকমাত্রায় পানি ও সার দেওয়া: গাছকে নিয়মিত খাবার দিন। যেমন- কালো মাটি, বালু বা ইটের চূর্ণ, সরিষা বা নীলের খোসা দিয়ে গাছের মাটি তৈরি করে নিন। রুটিন অনুযায়ী বনসাইয়ে পানি ও সার দেওয়ার প্রয়োজন নেই! আর্দ্রতা মিটার দিয়ে মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করে নিন। কিংবা মাটির গভীরে আঙুল প্রবেশ করে দেখতে পারেন। শুকনো থাকলে পানি দিন।

আবার এ গাছের জন্য খুব বেশি সারের প্রয়োজন হয় না। প্যাকেটে বর্ণিত নির্দেশাবলি অনুযায়ী মাত্রা ও পরিমাণ বুঝে নিন। তবে যে সব গাছ বনসাইয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে সেক্ষেত্রে প্রদত্ত নির্দেশাবলির থেকে কিছুটা কম সার প্রদান করতে হয়, যেন তাদের বেড়ে ওঠার মাত্রা ঠিক থাকে।

নিয়মিত পাত্র প্রতিস্থাপন: নিয়মিত পাত্র প্রতিস্থাপন করতে হবে। পাত্রে প্রতিস্থাপনের ফলে বনসাইয়ের আকার ছোট হয়ে যায় না। বরং এর ফলে গাছ নিয়মিত নতুন খাদ্য উপাদান পায় যা একে বেড়ে উঠতে এবং দ্রুত ফুল ধরতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত আলো সরবরাহ: বনসাই অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা ও রোদ- কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। তাই বিষয়টি খেয়াল রাখুন। আবার বাড়ির অভ্যন্তরের অপর্যাপ্ত আলো বেশিরভাগ বনসাই প্রজাতির গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও পাতার বৃদ্ধি কমে যায়। আলোর তীব্রতা খুব কম হলে গাছ একেবারে মারা যায় না। তবে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হ্রাস পায়। এই প্রতিকূল প্রভাব এড়াতে বনসাইটি ঘরের উজ্জ্বল আলোময় অংশে রেখে দিন। এছাড়াও ঘরোয়া আলোর সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ১০ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারেন গাছের বৃদ্ধিবান্ধব কৃত্রিম এলইডি আলো। 

সঠিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় রাখুন: ঘরের মধ্যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনসাই গাছ বাড়ানোর সময় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার হেরফের একটি বড় সমস্যা। ঘরের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের কড়া রোদ, বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস অথবা রুম হিটিং ও এয়ার কন্ডিশনার ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার হেরফের করে ফেলে, যা গাছের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এজন্য এ গাছের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা নিশ্চিন্ত করতে পানিপূর্ণ একটি ট্রেতে গাছটিকে স্থাপন করুন। দিনের বেলা ঘরের ভেতর বাতাসের চলাচল বাড়াতে জানালা খুলে রাখুন। তবে শীতকালে খোলা জানালা থেকে দূরে রাখুন যেন ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শ বেশি না পায়। 

অন্যান্য যত্ন: বনসাই ধুলো-ময়লামুক্ত রাখতে পানি দিয়ে পাতা ও ডাল মুছে দিন। টবের মাটিতে পোকামাকড় কিংবা ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব হলে সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করুন। গাছের নির্ধারিত আকৃতি ঠিক রাখতে নির্ধারিত ডালপালা বাদে ছাঁটাই করুন। বেশি ব্যস্ত থাকলে সঠিক মাত্রায় তরল সার প্রয়োগ করতে পারেন। অবশ্যই প্রতি এক বছর অন্তর টবের মাটি পরিবর্তন করুন। গাছের ছাঁটাইসহ অন্যান্য কাজে বনসাই পরিচর্যার জন্য নির্ধারিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন।

খেয়াল রাখবেন: বনসাইটির রুট বেইস ভালো কিনা। প্রাকৃতিকভাবেই গাছটি সৌন্দর্য প্রকাশ করছে কিনা। গাছের বাকলে বয়সের ছাপ স্পষ্ট কিনা। ভালো বনসাইয়ের মূল কাণ্ড দেখলেই বয়সের ছাপ বোঝা যায়। বনসাইটি আদি বৃক্ষের বৈশিষ্ট্য বহন করে কিনা। বনসাইটি দেখতে বড় বৃক্ষের মতো লাগে কিনা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //