দূরে থাকুক বার্ধক্য

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যায়, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। কিন্তু নিজের প্রতি যত্ন, ফিটনেস রুটিন, খাদ্যাভ্যাস ও ঘুম তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো যেগুলো বার্ধক্যকে দূরে রাখে।

যোগ ব্যায়াম : যোগ ব্যায়াম বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যোগ ব্যায়ামের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। যেমন- সেলুলার বার্ধক্য, ভারসাম্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে, যা সাধারণত বয়স্কদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। অক্সিডেটিভ মেডিসিন এবং সেলুলার লঙ্গেভিটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ১২ সপ্তাহ ধরে যোগ ব্যায়াম করা বার্ধক্যকে ধীর করতে পারে। ফ্রন্টিয়ার্স ইন হিউম্যান নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, তিন মাসের জন্য যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন করা ব্যক্তিরা চিন্তা ও চাপমুক্ত থাকেন।

মেডিটেরিয়ান ডায়েট : সুস্থতার আরেকটি অভ্যাস যা বার্ধক্যকে ধীর করে তা খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ব্লু জোনের মতে, মেডিটেরিয়ান ডায়েট আমাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়। ৬০-এর দশকে ইতালি ও গ্রিসের মানুষ যে ধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল তার ওপর ভিত্তি করেই মেডিটেরিয়ান ডায়েটের সূচনা। এটি দীর্ঘায়ুর একটি সুবর্ণ চাবিকাঠি। এই ডায়েটের মধ্যে আছে জলপাই তেল, তাজা শাকসবজি, মটরশুঁটি, কিছু মাছ এবং মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের ক্ষুদ্র অংশ। হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের মতে, গবেষণায় দেখা গেছে- এই বিশেষ ডায়েটটি আমাদের আয়ু বাড়িয়ে তুলতে পারে।

পেশির গঠন মজবুত রাখা : এটা আগেও শুনেছি যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশির সুঠাম গঠন গুরুত্বপূর্ণ। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের মতে, ৩০ বছর বয়সে পৌঁছানোর পর- প্রতি ১০ বছরে ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পেশির ভর হারাতে শুরু করে। 

শরীরের বার্ধক্য প্রক্রিয়ার এই প্রাকৃতিক ধাপকে সারকোপেনিয়া বলা হয়। এ বিষয়টি দূরে রাখতে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। আবার শরীরের শক্তি বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ওয়ার্কআউট করতে হবে। অবশ্য এজন্য আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। খাদ্যে ওমেগা-থ্রি যোগ, ভিটামিন ডির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং হাঁটা-চলা পেশি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

সামাজিকতা : বার্ধক্যকে দূরে রাখার আরেকটি গুরত্বপূর্ণ উপায় সামাজিক হওয়া। এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। মায়ো ক্লিনিকের মতে, সামাজিকতা আমাদের জ্ঞান, স্মৃতিশক্তি, মেজাজ ও সামগ্রিক সুস্থতা বাড়ানোর পাশাপাশি একাকিত্ব দূর করতে সহায়তা করে। এমনকি আমাদের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের মনোবিজ্ঞানী ডা. ক্রেইগ সাউচুক বলেন, ‘আমরা প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক প্রাণী। তাই আমরা যখন একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকি এবং অন্যদের পাশে থাকি- তখন আমাদের মাঝে ভালো কাজের প্রবণতা তৈরি হয়। যারা সামাজিকতা মেনে চলেন না তাদের বেশিরভাগ বিষণ্ণ থাকে। তাদের জীবনমানও উন্নত হয় না।’

পর্যাপ্ত ঘুম : পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। নিউজ ইন হেলথের মতে, পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের মেজাজ ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুস্বাস্থ্যের জন্য কঠিন ওয়ার্কআউট রুটিন এবং ডায়েট যতটা গুরুত্বপূর্ণ, পর্যাপ্ত ঘুম ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আবার পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্থূলতা, হৃদরোগ, ডিমেনশিয়া ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম গবেষক ড. কেনেথ রাইট মনে করেন, শরীরের কিছু রিপেয়ার প্রক্রিয়া আছে, যার বেশিরভাগ ঘুমের সময় বা গভীর ঘুমের মধ্যে ঘটে। সুতরাং পর্যাপ্ত না ঘুমালে সেই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। এনআইএইচের ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. মারিশকা ব্রাউনের মতে, স্বাস্থ্যকর ঘুমের পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, একটি হচ্ছে আপনি কতটা ঘুমান। অন্যটি হলো ঘুমের গুণমান, যেমন- নিরবচ্ছিন্ন ও সতেজ ঘুম। শেষটি হলো সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুমের সময়সূচি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //