নতুন বছরের পরিকল্পনা

ইতিবাচকভাবে নতুন বছরটি শুরু করতে হলে প্রয়োজন একটি সুন্দর পরিকল্পনা। আর প্রয়োজন কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা। তারপর নিজের সময়কে কাজে লাগিয়ে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন বছরের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। তাহলে নতুন বছরটি সফলতা বয়ে আনবে। এখানে নতুন বছরের পরিকল্পনার কিছু উপায় তুলে ধরা হলো। যেগুলো যে কাউকে সংগঠিত হতে ও লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

আর্থিক পরিকল্পনা : নতুন বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আর্থিক পরিকল্পনা। এজন্য প্রথমে খরচের খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তারপর কোন খাতে কীভাবে খরচ করতে চান তার একটি আর্থিক বাজেট তৈরি করতে হবে। অবশ্যই মিতব্যয়ী বাজেট হবে। তাহলে বছরের শুরু থেকে সঞ্চয় শুরু করতে পারবেন। আর্থিক পরিকল্পনা করতে প্রথমে মুদিখানা, পরিবহন, বাইরে খাওয়া এবং বিনোদনে কত টাকা বরাদ্দ করতে চান তা নির্ধারণ করুন। এটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে মনোনিবেশ ও সীমার মধ্যে থাকতে সহায়তা করবে। নগদ টাকায় কেনাকাটা করবেন নাকি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন তাও পরিকল্পনায় থাকা উচিত। একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, তা হলো বড় উৎসবের কথা। যেমন- ঈদ, পূজা বা বড়দিন। কারণ এই সময়ে ধারণার চেয়েও অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়। তাই ক্যালেন্ডারে উৎসবের দিনগুলো মার্ক করুন। তারপর ডায়েরিতে উৎসবের কেনাকাটার জন্য একটি পরিকল্পনা আগেই করে রাখুন। আরও ভালো হয় যদি উৎসবের কেনাকাটার জন্য বছরের শুরু থেকে আলাদা করে কিছু টাকা জমাতে শুরু করেন। তাহলে ওই সময়ে আর বাড়তি চাপ পড়বে না।

ফিট থাকুন : নতুন বছরে ওজন হ্রাস বা পেশি বাড়ানোর জন্যও পরিকল্পনা দরকার। যদি জিমে যেতে চান, তাহলে অবশ্যই আগে ভাবুন এটি কতটা ভালো হবে। এমন কিছু করতে হবে যা উপভোগ করেন। জুম্বার মতো নাচের ক্লাসগুলো ফিটনেস ধরে রাখতে আরেকটি বিকল্প হতে পারে। কারণ এগুলোতে প্রচুর ক্যালরি বার্ন হয়। আবার যদি আউটডোরে থাকতে পছন্দ করেন তাহলে সাইক্লিং, দৌড়ানো বা বুটক্যাম্প সেরা উপায় হতে পারে।

সম্পর্ক নিয়ে ভাবুন : জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক। কারণ সামাজিকতা রক্ষায় আমাদের অনেকের সঙ্গে মিশতে হয়, চলতে হয়। এজন্য আমাদের নানামুখী সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নতুন বছরে এসে সেই সম্পর্কগুলোকে ঝালাই করে নিন। আপনার জন্য মঙ্গলজনক, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলুন। অন্যদিকে যারা ক্ষতি চায়, কিংবা ঝামেলায় ফেলতে চায়- তাদের কৌশলে এড়িয়ে চলুন। সামাজিকতা রক্ষায় অনেকের সঙ্গে মিশতে হয় ও হবে। তার মানে এই নয় সবার সঙ্গে সম্পর্ক মানিয়ে চলতে হবে।

নতুন কিছু শিখুন : নতুন কোনো কিছু শেখার পরিকল্পনা করে নতুন বছরটি শুরু করুন। এখন তো অনলাইনের কল্যাণে ঘরে বসেই অনেক কিছু শেখা যায়। বাদ্যযন্ত্র, ভাষা বা খেলা যা-ই হোক না কেন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা সারা বছর ধরে শক্তি জোগাবে। নতুন বছরের শুরু জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের উপযুক্ত সময়। তাই নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে সেই পরিবর্তন আনুন। দেখবেন আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

ভ্রমণ পরিকল্পনা : মানসিক সুস্থতার জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই। যদি নতুন বছরে কয়েকটি ট্রিপে যেতে চান, তাহলে এখন থেকেই সঞ্চয় শুরু করুন। তবে ভ্রমণ পরিকল্পনার সময় অবশ্যই রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকার আশঙ্কা থাকতে পারে এমন জায়গা তালিকায় রাখবেন না। একটু সাবধানে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলো ভ্রমণের তালিকায় রাখুন। জাতীয় ছুটির সঙ্গে আরও কয়েক দিন যোগ করলে ভ্রমণের সময়টাও বেশি হবে।

লক্ষ্যগুলো লিখুন : সারা বছরের লক্ষ্যগুলো লিখুন। যেন সেগুলো পূরণ করতে পারেন। কাগজে কলম দিয়ে লক্ষ্যগুলো লেখার মাধ্যমে নিজের মধ্যেও কমিটমেন্ট তৈরি হয়। লক্ষ্য নির্ধারণ করা থাকলে বছরের প্রথম দিন থেকে অগ্রগতি চিহ্নিত করা যায়। তাছাড়া একটি রুটিন তৈরিতেও এটি সহায়তা করে। যদি প্রতি সন্ধ্যায় পরের দিনের টু-ডু তালিকা লেখা সম্ভব হয়, তাহলে আমাদের প্রতিদিনের কাজগুলোও অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে তালিকা আবার খুব লম্বা করবেন না। কারণ দীর্ঘ তালিকা মনোবল ভেঙে দিতে পারে। আবার যদি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না হয় তাহলে নিজেকে পরাজিত ভাববেন না।

বই পড়ুন : জানুয়ারি মাস একটি নতুন বইকে সঙ্গী করার সেরা সময়। কিছু বইয়ের তালিকা করে নিন। তারপর পর্যায়ক্রমে সেগুলো পড়ুন। এতে জ্ঞান বাড়ার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও যত্ন নেওয়া হবে। আর বই পড়া একটি ভালো অভ্যাস। এই অভ্যাস পারিবারিক জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নতুন বছরে বই পড়ার অভ্যাসটাকে আরও বাড়িয়ে তুলুন।

হয়ে উঠুন প্লান্টপ্রেমিক :  নতুন বছর থেকে প্লান্টপ্রেমিক হয়ে উঠুন। বাসায় বা অফিসে ইনডোর প্লান্ট রাখুন। ইনডোর প্লান্টের উপস্থিতি মানসিক চাপের মাত্রা কমাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদের যত্ন নিলে স্নায়ুতন্ত্র ভালো থাকে এবং রক্তচাপ কমে।

নিজের সমালোচনা করুন : নিজের সমালোচনা করা সহজ নয়। তবে এটি করতে পারলে লক্ষ্য পূরণের দিকে অনেকটা এগিয়ে যাবেন। তাই নিজের কাজের সমালোচনা করে কিছু লিখুন। নিজেকে কোন কাজের জন্য ভালো বলবেন আর কোন কাজের জন্য বলবেন না তাও স্পষ্ট করে লিখুন। তাহলে নিজের ভুল সহজে ধরতে পারবেন। স্ট্যানফোর্ডের সেন্টার ফর কাইন্ডনেসের গবেষক এমা সেপ্পালা বলেছেন, ‘নিজের সম্পর্কে কিছু লেখা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সহজ করে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //