রোজা রাখলে শরীরের যেসব উপকার হয়

ধর্মীয় বিবেচনায় রোজা যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরয ইবাদত তেমনি রোজা রাখার মধ্য দিয়ে পাওয়া যায় অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। কোরআন ও হাদিসে রোজার গুরুত্বের বিবরণ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টির সঙ্গে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোজা রাখার অভ্যাসে উচ্চ রক্তচাপ, নানা ধরনের হৃদরোগবিষয়ক জটিলতা দূর হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও ইতিবাচকভাবে জীবনদর্শনেও রোজা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

রোজার গুরুত্ব অনুধাবন করে ডা. আইজাক জেনিংস বলেছেন, যারা আলস্য ও গোঁড়ামির কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোজা তাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করে। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাস্টবারনার বলেন, ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েক দিনের রোজার কারণেই নিরাময় হয়।

রোজা রাখলে স্বাস্থ্যকর রক্তকনিকার পুনর্জন্ম থেকে শুরু করে হার্টের কার্যকারিতার উন্নতি সাধন, পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা, মস্তিস্কের বিকাশ সাধন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ আরও অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।

রোজা রাখার কারণে শরীরের যেসব উপকার হয়:

১। রোজা রাখলে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়। রোজার দিনে দীর্ঘ সময় খাবার গ্রহণ না করার কারণে আমাদের শরীরের লিভার, পাকস্থলী এবং অন্যান্য অঙ্গ বিশ্রাম পায়। যেহেতু আমাদের শরীর তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে থাকে তাই এসময় আমাদের শরীরে যে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ গুলো জমা হয়ে ছিল সেগুলো শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে করে আমাদের অঙ্গ প্রতঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, পরিপাকতন্ত্র পরিস্কার হয়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে।

২। লম্বা সময় খাবার থেকে বিরত থাকার কারণে আমাদের পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়, লিভার থেকে এনজাইম নিঃসরণ হয় যেগুলো শরীরের চর্বি এবং কোলেস্টেরলকে ভেঙ্গে বাইল এসিডে  রুপান্তরিত করে যেটা কিনা পরিশেষে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া যে খাবার গুলো আগে হজম হয়নি সেগুলো হজম হয়ে পাকস্থলী ও অন্ত্র পরিষ্কার হয়। এছাড়া রোজা টানা রাখার কারণে ক্ষুধা কমে যায় এবং শরীরে ক্ষুধা সৃষ্টির হরমোন কম নিঃসৃত হয় যার ফলে অল্প খেলেই ক্ষুধা মিটে যায়। এই পরিবর্তনও পরিপাকতন্ত্র এবং হজমের জন্য ভালো।        

৩।  রোজা রেখে স্বাস্থ্যকর খাবার পরিমিত ভাবে খেলে ওজন কমানো খুব সহজ হয়ে যায়। কেননা লম্বা সময় না খেয়ে থাকার কারণে আমাদের শরীর বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ সাধনের জন্য শরীরে উপস্থিত চর্বিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে থাকে। যেহেতু এ প্রক্রিয়ার শরীরে জমা চর্বি ব্যবহিত হয়ে যায় এতে করে ওজন হ্রাস পায়।      

৪। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার মধ্যে শ্বেত রক্তকনিকা অন্তর্ভুক্ত এবং রোজা রাখার মাধ্যমে নতুন শ্বেত রক্তকনিকার উৎপত্তির মাধ্যমে আরও বেশি কার্যকরী হয় এবং স্বাস্থ্য সম্মত ও বলিষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। এছাড়া দীর্ঘ সময় খাবার বিরতির পর ইফতার করলে শরীরে “স্টিম সেল” নামক কোষ পুনরুদ্ধার হয় যেখানে লাল এবং শ্বেত রক্ত কনিকা ও প্লাটিলেট থাকে যার কারণেও আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।    

৫। রোজা রাখলে রক্তচাপ কমে। দিনের লম্বা সময় খাবার না খাওয়ার কারণে শরীর লবণ গ্রহণ করে না এবং সারাদিনে ইউরিন বা মুত্রের সাথে লবণ বের হয়ে যায়। যার ফলে রোজা রাখার কারণে রক্তচাপ কমে।  

৬। রোজা রাখলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যায়। রোজা রাখার কারণে আমাদের শরীরে “হিউম্যান গ্রোথ হরমোন” নামে একটি হরমোন উৎপন্ন হয় যেটা শরীরের চর্বি গলাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।  

৭। রোজা রাখার কারণে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান হ্রাস পায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয় ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং উন্নতি সাধন হয়।  

৮। রোজা রাখার কারণে ক্যালরি, চিনি এবং লবণ কম পরিমানে খাওয়া হয় যার কারণে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য শক্তিশালী হয়, স্ট্রেস কমে এবং মানসিক সচ্ছতা পাওয়া যায়। রোজা রাখা অবস্থায় রক্তে “এনডোরফিনস” নামক হরমোন এর পরিমান বৃদ্ধি পায় যেটা নাকি একটা প্রশান্তির অনুভূতি দেয়। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায়।      

৯। রোজা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস রক্তের সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যার কারণে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে টাইপ-২ ডায়াবেটিক এর ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।   

১০। রোজা রাখার কারণে শরীরে বেশ কিছু প্রক্রিয়া হয়ে থাকে যেমন অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলি নিজেই নিজেদের অপসারণ করে। এছাড়া শরীরে জমা থাকা ক্ষতিকর পদার্থ শারীরিক প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বের হয়ে যায়। পরিপাকতন্ত্র, লিভার, হার্ট এবং অন্যান্য অঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন হয়। সব মিলিয়ে শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর হবার সম্ভাবনা থাকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //