অফিস গসিপ

সোহেল প্রতিদিন অফিসে দেরি করে আসে বা তানিয়া বসের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়। কিংবা সুমি জানানোর আগেই অফিসে ছড়িয়ে পড়েছে, সুমি ও রিপন বিয়ে করেছেন। এ সবই প্রতিদিনের অফিস গসিপের অংশ। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় বেশিরভাগ ঘটনা সত্যি নয়। কিন্তু সেগুলো ডালপালা মেলে অনেক বড় হয়ে পুরো অফিসে ছড়িয়ে পড়েছে।

অফিস গসিপগুলো এক প্রকার গুজবের মতো। আর গুজব কখনো ভালো কিছু হতে পারে না। তাই অফিস গসিপের ব্যাপারে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। সুতরাং অফিসে এসব আলোচনা বাদ দিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কাজের সমস্যা বা কীভাবে আরও ভালো করা যায় সেসব আলোচনা করা উচিত।

গসিপ কী: ‘গসিপ’ হলো কারও অনুপস্থিতিতে তাকে নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা করা। কিংবা কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা করা। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, অনেকে কারও সম্পর্কে না জেনে কান কথা ছড়াতে পছন্দ করেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, গসিপের মধ্যে শুধু মিথ্যা গল্প ছাড়া আর কিছু থাকে না। কারও কাছে আবার গসিপ হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যে কোনো বিষয়ে আলোচনা করা। তবে যে যা-ই বলুক-গসিপ করা নিন্দনীয় কাজ। তা ব্যক্তিগত বা পেশাদার যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন।

আটলান্টাভিত্তিক মোটিভেশনাল স্পিকার ও লেখক পিটার ভাজদা অফিস গসিপকে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার একটি রূপ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি গসিপকে ‘আক্রমণের একটি রূপ’ বলেছেন। অবশ্য গ্রোবিজ মিডিয়ার সিইও রিভা লেসোনস্কির মতে, কর্মক্ষেত্রে কিছু গসিপ আসলে স্বাস্থ্যকর। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি একটি টিমের মধ্যে সৌহার্দ দেখায়। কিন্তু তা যদি কারও অনুভূতিতে আঘাত করতে শুরু করে বা মনোবল বা মনোভাবকে প্রভাবিত করতে শুরু করে, তখনই সীমা অতিক্রম করা হয়। তাই নিজেদের সীমা নিয়ে অবহিত থাকতে হবে। মানে কোথায় থামতে সেটা জানতে হবে ও সতর্ক থাকতে হবে। না হলে গসিপ আর গসিপ থাকবে না, তা হয়ে যাবে কারও সম্পর্কে গুজব ছড়ানো।’

গসিপের ক্ষতিকর দিক: অফিস গসিপকে খুবই গুরুতর বলেছেন লেখক ন্যান্সি কুরল্যান্ড ও লিসা হোপ পেলেড। একাডেমি অব ম্যানেজমেন্ট রিভিউয়ে প্রকাশিত ‘পাসিং দ্য ওয়ার্ড: গসিপ অ্যান্ড পাওয়ার ইন দ্য ওয়ার্কপ্লেস’ প্রবন্ধে তারা লিখেছেন, ‘কর্মক্ষেত্রে গসিপারের যদি বেশি ক্ষমতা থাকে, তাহলে গসিপ খুব গুরুতর হতে পারে। তা খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’ তারা অফিসে গসিপের কিছু নেতিবাচক পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো-আস্থা ও মনোবল হ্রাস, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা হারায়, সময়ের অপচয় হয়, কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে, সহকর্মীদের মাঝে বিভাজন বা গ্রুপ তৈরি হয়, কর্মপরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে, অনেক কর্মী প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান, কর্মীদের মাঝে অফিস পলিটিক্স শুরু হয়।

ই-মেইল গসিপ: করপোরেট ই-মেইল গসিপ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি বিপজ্জনক পদ্ধতি হতে পারে। কারণ যারা গসিপ পছন্দ করেন না, বা শুনতে চান না তাদের কাছেও সহজেই ই-মেইল পাঠানো যায়। ম্যাস হাইটেকের একটি নিবন্ধে অ্যাটর্নি ওয়ারেন অ্যাগিন লিখেছিলেন, ‘যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের গসিপের জন্য করপোরেট ই-মেইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করা উচিত। কারণ কর্মচারীরা প্রায়ই ই-মেইল যোগাযোগকে মৌখিক কথোপকথনের মতো বিবেচনা করেন। তারা সেখানে এমন কিছু লেখেন, যা কখনো কোনো চিঠি বা স্মারকলিপিতে লেখেন না।’

সমাধান: অফিস গসিপের সমাধান খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। অন্যকে নিয়ে আড়ালে কথা বলা কিছু মানুষের স্বভাব। যাদের এই স্বভাব আছে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রায় অসম্ভব। কারণ তারা অন্যদের নিয়ে গুজব ছড়িয়ে এক ধরনের মানসিক শান্তি খোঁজে। কিংবা যাদের যোগ্যতা কম তারা অন্যের কাছে কথা পাচার করে টিকে থাকতে চান। এটা তাদের এক ধরনের কৌশল। তাই অফিস গসিপের সমাধান সত্যিই অসম্ভব। বরং এ ধরনের মানুষকে চিহ্নিত করা সম্ভব হলে, তাদের এড়িয়ে চলাটাই ভালো হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //