ঈদের পর স্বাস্থ্যকর খাবার

কোরবানির ঈদের পর খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। এ সময় মাংস ভুনা, গরুর ভুঁড়ি, খাসির গোস্ত, কাবাব, কালাভুনাসহ হরেক পদের মাংস রান্না হয়। তবে ভুলে গেলে হবে না অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। ঈদের পর অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই এ সময় কীভাবে সুস্থ থাকা যায় তা নিয়ে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ সুমাইয়া ইসলাম।

চার বেলার খাবার: সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করতে হবে। তারপর হালকা গরম পানিতে লেবুর রস বা আদার রস দিয়ে পান করতে হবে। জিরা পানিও খাওয়া যেতে পারে। এর আধা ঘণ্টা পর লাল আটার রুটি, এক বাটি সবজি খাওয়া যেতে পারে। এগুলো শেষে টক দই বা দইয়ের লাচ্ছি খাওয়া যেতে পারে। আর দুপুরে এক কাপ ভাত, শাক-সবজি, মাছ, পাতলা ডাল, আধা বাটি সালাদ খেতে হবে। ঈদের সময়ে প্রচুর পরিমাণে তাজা শাক-সবজি খাওয়া উচিত। মাছ খেলে তার সঙ্গে কম তেল, মসলা ও সবজি দিয়ে একটু ঝোল করে রান্না করতে হবে।

বিকেলে ফাস্ট ফুড, তেলেভাজা খাবার, চানাচুর, বিস্কুট এড়িয়ে চলতে হবে। এর বদলে তাজা ফল, সবজির স্যুপ বা এক মুঠো বাদাম খাওয়া যেতে পারে। আর রাতের খাবারে খুব সাবধান থাকতে হবে। পাতলা রুটি, সবজি, এক টুকরা মাছ, ডাল, সালাদ খেতে পারেন। যাদের ভাতে আগ্রহ তারা সামান্য ভাত খেতে পারেন। রাতের খাবার ৮টার আগে খাওয়া উচিত।

গ্রিন টি: এ সময় মেটাবোলিজম বাড়াতে গ্রিন টি পান করতে হবে। বিভিন্ন গবেষণায় এর গুণাগুণ প্রমাণ হয়েছে। গ্রিন টি মেটাবোলিজম বাড়িয়ে খাবার হজমে সহায়তা করা, শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রাখে, ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যদি বেশি খাওয়া হয়ে যায়, তাহলে গ্রিন টি হজমে সহায়তা করবে। মূলত খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে। আধাঘণ্টা পর এক কাপ গ্রিন টি পান করতে হবে। তাহলে অতিরিক্ত খাওয়ার অস্বস্তি ধীরে ধীরে কমে আসবে। এছাড়া প্রতিদিন গ্রিন টি পান করা একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।

সঠিক সময়ে খাওয়া: ঈদের পর বেশিরভাগ মানুষের খাবারের রুটিনে পরিবর্তন আসে, যা বদহজমসহ পাকস্থলীর নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। তাছাড়া দুবেলা খাবারের মাঝে যথেষ্ট সময় থাকা প্রয়োজন। একবেলা খাওয়ার ন্যূনতম ৬ ঘণ্টা পর পরের বেলার খাবার খাওয়া উচিত, এতে আগের খাবার হজম হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে। এছাড়া এ সময়ে পরিমিত খেতে হবে।

সবজি যেন বাদ না পড়ে: কোরবানির ঈদে দেখা যায় বেশিরভাগ খাবারের আইটেম মাংসের হয়। অনেকে ঈদের পরের কয়েক সপ্তাহ বিভিন্ন পদের মাংস, কাবাব, হালিম ও অন্যান্য ভারী খাবার খান। এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতি বেলায় চেষ্টা করুন অন্তত এক থেকে দুই পদের সবজি রাখার। তাহলে খাবারে ফাইবার যোগ হবে।

হাঁটাহাঁটি করা: গরু, খাসি ও অন্যান্য লাল মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই যাদের স্থূলতা আছে বা হার্টে চর্বি জমেছে, তাদের এসব মাংস কম খাওয়া উচিত। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে অন্তত ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা উচিত। চাইলে খাওয়ার আগেও কিছুটা সময় হাঁটা যেতে পারে। তাহলে খাবার ভালোভাবে হজম হওয়ার সুযোগ পাবে। আর ভারী খাবার খাওয়ার ৩ ঘণ্টা পর ব্যায়াম বা হালকা শরীরচর্চা করলে অতিরিক্ত ক্যালরিও বার্ন হবে।

গ্রিল মাংস: ডিপ ফ্রায়েড খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ঈদে এ ধরনের খাবার বেশি খাওয়া হয়, এতে পেটের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এসব সমস্যা এড়াতে গ্রিল করা গরু, খাসি ও অন্যান্য মাংস খেতে পারেন। এতে তেল কম পরিমাণে লাগে। চাইলে ক্ষতি আরেকটু কমাতে রেগুলার রান্নার তেলের বদলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া সয়াবিন তেলের বদলে রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করেও উপকার পাবেন। এর সঙ্গে কিছু সবজি গ্রিল করতে পারেন। তাহলে খাদ্যতালিকা আরও সমৃদ্ধ হবে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //