বিচিত্র কিছু দিবস

কখনো ‘আনলাকি দিবসের’ কথা শুনেছেন? কিংবা ‘আনফ্রেন্ড দিবসের’ কথা? হয়তো ভাবছেন এগুলো নিয়ে আবার দিবস হয় নাকি! হয়তো অদ্ভুত লাগছে শুনতে! কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতায় প্রতিদিনই এমন কোনো না কোনো দিবস আছে, যার বেশিরভাগের কথা জানি না। তেমন কয়েকটি বিচিত্র দিবসের কথা জেনে নিন।

প্রতিশ্রুতি রাখার দিবস
প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিতে আছে ‘প্রতিশ্রুতি দিবস’। প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি দিবসটি উদযাপন করা হয়। প্রতিশ্রুতি দিবস অনেক বছর ধরে চলে আসছে। ১৯৬০ সালে প্রথম প্রতিশ্রুতি দিবস পালন করা হয়। তাও আবার ইংরেজি নববর্ষের রেজ্যুলেশন হিসেবে। সেই থেকে এখনো দিবসটি উদযাপন করা হয়।

আনলাকি দিবস
প্রতিবছরের ৩১ ডিসেম্বর ‘আনলাকি দিবস’ পালন করা হয়। দিনটির নাম ‘আনলাকি দিবস’ হলেও মোটেও আনলাকি নয়। ‘আনলাকি দিবস’ পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে নতুন বছর শুরুর প্রচেষ্টা। যেহেতু এটি বছরের শেষ দিন তাই সারা বছর ঘটে যাওয়া খারাপ ঘটনাকে ভুলে গিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখার দিন, ভারমুক্ত হওয়ার দিন। তবে কবে থেকে বা কীভাবে ‘আনলাকি’ দিবস পালন শুরু হয় তা জানা যায়নি।

কমনসেন্স ব্যবহার দিবস
‘ইউজ ইওর কমন সেন্স ডে’ সহজ বাংলায় বলতে গেলে বলতে হবে, কা-জ্ঞান ব্যবহার দিবস। প্রতিবছরের ৪ নভেম্বর এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। ধারণা করা হয়, প্রখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল প্রথম কমনসেন্সকে লাইমলাইটে আনেন। আর কমন সেন্স ডে চালু করেছিলেন ক্যারিয়ার মেন্টর, মোটিভেশনাল স্পিকার, ব্লগার ও লেখক বাড বিলানিচ। ২০১৫ সালে প্রথম কমন সেন্স দিবস পালন করা হয়।

আনফ্রেন্ড দিবস
ফেসবুকের বন্ধু তালিকা স্ক্রল করলে দেখা যাবে, সেখানে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের চিনি না। আবার বন্ধু তালিকায় থাকা কেউ কেউ বিরক্ত করেন। তাই তাদের বন্ধু তালিকা থেকে ছাঁটাই করার জন্য একটি দিবস আছে। আর তা হলো আনফ্রেন্ড দিবস। কৌতুক অভিনেতা জিমি কিমেল ২০১৪ সালে ‘আনফ্রেন্ড ডে’ প্রতিষ্ঠা করেন। দিনটি প্রচলনের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত ও বিরক্তিকর ব্যক্তিকে বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।

দাদা-নানা দিবস
খুব কাছের মানুষদের অন্যতম দাদা ও নানা। বলতে গেলে আমাদের শৈশবকে রঙিন করে তোলেন এই দুজন। তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে ২২ জানুয়ারি দাদা-নানা দিবস বা গ্রান্ডপা’স ডে পালন করা হয়। শুরুতে পোল্যান্ডে দিবসটির উদযাপন শুরু হলেও বর্তমানে অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৬৪ সালে ‘কোবিয়েটা ই জেসি’ ২১ জানুয়ারি দাদি-নানি দিবসের প্রচলন করেন। এরপর দাদা-নানা দিবসের প্রচলন শুরু হয়। যদিও কত সাল থেকে দাদা-নানা দিবসের উদযাপন শুরু হয় সেই তথ্য জানা যায়নি।

পাসওয়ার্ড দিবস
প্রতিবছর মে মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার পাসওয়ার্ড দিবস পালন করা হয়। ডে’জ অব দ্য ইয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টেল এই দিবসটির প্রচলন করে। ইন্টেলের উদ্দেশ্য ছিল, হ্যাক ও অন্যান্য সাইবার অপরাধ রোধ করা এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারে সবাইকে সচেতন করা। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছিল।

তোমাকে ধন্যবাদ দিবস
যে মানুষটি আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলেছে তাকে ধন্যবাদ জানাতে আছে ‘তোমাকে ধন্যবাদ’ বা ‘থ্যাঙ্ক ইউ ডে’। প্রতিবছর ১১ জানুয়ারি ‘তোমাকে ধন্যবাদ’ বা ‘থ্যাঙ্ক ইউ ডে’ পালন করা হয়। ‘ধন্যবাদ’ শব্দটির উৎপত্তি ৪৫০ থেকে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বলে মনে করা হয়। 

পপকর্ন দিবস
পপকর্ন! ছোট থেকে বড়, সবার পছন্দের খাবার। স্কুলের বাইরে, রাস্তার মোড়ে, বাসে বা ট্রেনে সবখানেই দেখা মেলে এটির। কিন্তু অনেকেই জানি না, পপকর্ন নিয়ে একটি দিবস আছে। প্রতিবছরের ১৯ জানুয়ারি পপকর্ন দিবস উদযাপন করা হয়। 

সানগ্লাস দিবস
সানগ্লাস বা রোদ চশমা যেমন ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে পরা যায়, আবার রোদ থেকে চোখ রক্ষা করতে পরা যায়। কমবেশি প্রায় সবাই সানগ্লাস পরেন। যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ জুন সানগ্লাস দিবস উদযাপন করা হয়। ভিশন কাউন্সিল নামের একটি প্রতিষ্ঠান সানগ্লাস দিবসের প্রচলন করে। তারা মানুষের চোখের যতœ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে দিবসটির প্রচলন করে।

গোসল দিবস
গোসল শরীর-মনে প্রশান্তি আনে। জানেন কি, ১৪ জুন আন্তর্জাতিক গোসল দিবস। কিংবদন্তি অনুসারে, ১৪ জুন গ্রিক গণিতবিদ, বিজ্ঞানী এবং প-িত আর্কিমিডিস গোসল করার সময় আবিষ্কার করেছিলেন, পানিতে ডুবিয়ে কোনো বস্তুর আয়তন সঠিকভাবে পরিমাপ করা যেতে পারে! এই আবিষ্কারের উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরে আর্কিমিডিস চিৎকার করে বলেন, ‘ইউরেকা, ইউরেকা!’ শুধু তাই নয়, তিনি আনন্দে গ্রিসের সিরাকিউজের রাস্তায় দৌড়াতে শুরু করেন। সেই দিনকে স্মরণে এ দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।

গাধা দিবস
গাধা বোকা হোক বা চালাক হোক, ৮ মে গাধা দিবস পালন করা হয়। বিশ্ব গাধা দিবসের প্রচলন করেছিলেন আর্ক রাজিক। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন গাধারা মানুষের জন্য যে পরিমাণ কাজ করে, সেই পরিমাণ স্বীকৃতি পাচ্ছে না। এজন্য তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেন। তারপর সেখানে গাধা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য প্রচার করতে শুরু করেন। আর্ক রাজিকের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে প্রথম বিশ্ব গাধা দিবস উদযাপন করা হয়। 

স্বামীর প্রশংসা করার দিবস
বাবা দিবস ও পুরুষ দিবসের কথা আমাদের সবার জানা। কিন্তু কখনো শুনেছেন স্বামীকে প্রশংসা করার জন্য একটি দিবস আছে? এপ্রিলের তৃতীয় শনিবার স্বামীর প্রশংসা দিবস বা ‘হাজব্যান্ড অ্যাপ্রেসিয়েশন ডে’ উদযাপন করা হয়। এই দিবসটির কীভাবে প্রচলন হয়েছিল তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি। 

গরম চা দিবস
গরম চা নিয়েও একটি দিবস আছে। ১২ জানুয়ারি ‘গরম চা দিবস’ বা ‘হট টি ডে’ উদযাপন করা হয়। ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ২০১৬ সালে এই কাউন্সিল ‘হট টি ডে’ প্রচলন করে।

ফাস্ট ফুড দিবস
ফ্রায়েড চিকেন, পিজ্জা, হট ডগস, চিপস, হ্যামবার্গার----নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। ফাস্ট ফুড ভক্তদের জন্য একটি দিবস আছে, ১৬ নভেম্বর ফাস্ট ফুড দিবস। যদিও ফাস্ট ফুড দিবসের প্রচলন নিয়ে যথেষ্ট তথ্য নেই এবং কে এটির ধারণা দিয়েছিল তাও জানা যায়নি। 

সিঙ্গেল ডে
উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশগুলোর একটি চীন। কিন্তু হঠাৎ কেন চীনের কথা বলছি? এর কারণ হলো সিঙ্গেলদের জন্য একটি দিবস আছে----‘সিঙ্গেল ডে’। আর চীনারাই এই দিনটির উদ্ভাবক। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও আধুনিক চীনা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই ‘সিঙ্গেল ডে’। ১১ নভেম্বর সিঙ্গেল ডে উদযাপন করা হয়। ধারণা করা হয়, ১৯৯০-এর দশকে একা থাকা মানুষদের জন্য প্রথম ‘সিঙ্গেল ডে’ উদযাপন করা হয়। ১১ নভেম্বর এমন তারিখ যেখানে ৪টি ‘এক’ আছে। তাই মনে করা হয় তারিখটি ৪টি একক ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এজন্যই দিনটিকে ‘সিঙ্গেল ডে’ হিসেবে প্রচলন করেন নানজিং বিশ্ববিদ্যালয় ৪ শিক্ষার্থী। ধারণাটি পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত চীনের মূলধারার সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে যায়।

প্রাক্তনকে ক্ষমা করার দিবস
ক্ষমা একটি বড় গুণ। আর প্রাক্তনকে ক্ষমা করার জন্য একটি দিবস আছে, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফরগিভ অ্যান এক্স ডে’। দিনটির উদ্দেশ্যই হলো সব ভুলে প্রাক্তনকে ক্ষমা করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রতিবছরের ১৭ অক্টোবর দিবসটি উদযাপন করা হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //