রান্নার টুকিটাকি দিয়ে চুলের যত্ন

একটা প্রচলিত কথা আছে ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। নারী আর রান্না যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অপরদিকে নারীর সৌন্দর্য চুলে। আর রান্নাঘরের টুকিটাকি দিয়েই চুলের যত্ন নিন খুব সহজেই। আবার চুলের যত্নে বাজারে নামিদামি নানা ধরনের প্রসাধনী পাওয়া যায়। তবে তা সবার জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ এসব প্রসাধনীতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা বেশি ব্যবহারের ফলে চুলের নানা ক্ষতি হতে পারে। তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই চুলের যত্নে ব্যবহার করা যায় রান্নার নানা উপাদান। রান্নাঘরের টুকিটাকি দিয়ে যেভাবে প্যাক তৈরি করবেন:

ডিম, টক দই ও মধু:
প্রথমে একটি পাত্রে একটি ডিম, আধা কাপ টক দই, ৩-৪ টেবিল চামচ মধু, ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ২ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর চুল ভালোভাবে ধুয়ে মাইল্ড কোনো শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এই প্যাককে সাধারণত প্রোটিন প্যাক বলা হয়। 

ডিম প্রোটিন ও কোলিনের সেরা উৎস, চুলে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে ডিম অনেক বড় ভূমিকা রাখে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স চুলের গোড়া শক্ত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে। ডিমে থাকা বায়োটিন চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও চুল পড়া কমায়। মধু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, চুল ভাঙা রোধ করে। টক দইয়ে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৬, বি ফ্যাট ও মিনারেল। টক দই প্রাকৃতিকভাবে ডিপ কন্ডিশন করে, স্ক্যাল্পের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং খুশকি কমাতে সাহায্য করে।

অনেক সময় দেখা যায় চুলে ডিম ব্যবহার করলে গন্ধ যেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে প্যাকটির সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস বা এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে লাগাতে হবে। অথবা শ্যাম্পুর পর এক মগ পানিতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস বা আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেললে গন্ধ চলে যাবে।

চা পাতা, মেথি ও আদার রস:
এক কাপ পানিতে ২-৩ টেবিল চামচ চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে আধা কাপ পরিমাণ বানিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি বাটিতে মেথি গুঁড়া ২-৩ টেবিল চামচ, আমলকী গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, আদার রস এক টেবিল চামচ, নারকেল তেল ২ টেবিল চামচ ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। ২০-২৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর চা পাতা চুলকে ডিপ কন্ডিশন, কালো ও ঝলমলে করে। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন লেসিথিন ও আয়োডিন রয়েছে, যা চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায় এবং মজবুত করে। চুলের অকালপক্বতা রোধ, চুল বৃদ্ধি ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আদায় থাকে জিঞ্জারল নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল; যা চুলের কোষ ক্ষতিকারক উন্মুক্ত রেডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে চুল পড়া কমায় এবং খুশকিমুক্ত রাখে।

মধু, কলা ও অ্যালোভেরা:
একটি পাকা কলার সঙ্গে এক টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১-২ টেবিল চামচ আমলকীর রস ও ২-৩ টেবিল চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। তবে কলার পেস্ট বেশিক্ষণ চুলে না রাখাই ভালো। ৭-৮ মিনিট রেখে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। কলায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন থাকে যা চুলকে মোলায়েম ও ঝলমলে করে। এটি খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুল পড়া কমায়। অ্যালোভেরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করে।

নারকেলের দুধ, আমলকী ও মেথি গুঁড়া:
এক কাপ নারকেলের দুধের সঙ্গে আধা কাপ মেহেদির গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ আমলকীর রস ও ২ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে স্ক্যাল্প থেকে চুলের আগা পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা রেখে সালফেট ফ্রি বা মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। নারকেলের দুধে থাকে জিংক, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ফরফরাস, পটাশিয়াম- যা চুলের জেল্লা ফেরায়, নতুন চুল গজায়। আমলকীতে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে ও খুশকি কমাতে সাহায্য করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //