বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

সারা দিনের ঝঞ্ঝাট, মানসিক অবসাদ, জীবনের যাবতীয় নেতিবাচকতা থেকে ডুব দিতে চাই এমন এক জগৎ, যেখানে ‘আমি’ কে, তা ভুলে হারিয়ে যাওয়া যাবে প্যারিসের শৈল্পিক পথ ধরে বা নক্ষত্রপুঞ্জে নাম জপতে জপতে ছুঁয়ে দেওয়া যাবে কোনো গ্রিক দেবতার আঙুল। হয়তো বা রাশি রাশি সুখে ভরা জীবন বা বৈজ্ঞানিক সূত্রে মন দিয়েই শুরু করা যাবে কোনো সকাল। হ্যাঁ, এমন এক জগতে গা ভাসাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বই। 

প্রতিবছরই অনেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক বই পড়ার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। কিন্তু নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনার মতোই অধরা থেকে যায় তা, অর্জিত হয় না লক্ষ্যমাত্রা। একটি ভালো বই গভীরভাবে ভাবতে শেখায়, নিজের ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করে, দক্ষতা বাড়ায়, দুশ্চিন্তা কমায় ও মনকে ফুরফুরে রাখে।

নানা কারণে যাদের বই পড়া হয়ে উঠছে না এবং বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে চাচ্ছেন, তারা বাস্তবিক কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে বইয়ের প্রতি টানও মুখ্য বিষয়ের মধ্যে পড়ে। বলা বাহুল্য, যারা বইয়ের প্রতি টান অনুভব করেন, তাদের কোনো পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একসঙ্গে বিভিন্ন কাজে যারা জড়িত রয়েছেন তাই তৈরি হয়েছে বইয়ের সঙ্গে দূরত্ব, তারা ফের বই পড়ার অভ্যাসে ফিরে যেতে পারেন বাস্তবিক কিছু উপায়ে।

বই পড়ার অভ্যাস তৈরির সময় প্রথমেই নিজের মনোযোগ সম্পর্কে জানতে হবে। কোন বিষয়টিতে আগ্রহবোধ করেন, সেই ধাঁচের বই দিয়ে শুরু করুন। যা আপনাকে টানবে, আকর্ষণ করবে। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখুন যে, বছরে অন্তত ২৪টি বই পড়বেন। আবার ১২টিও হতে পারে। এটি নির্ভর করবে পড়ার গতি ও কী ধরনের বই পড়ছেন, তার ওপর। তবে বই পড়ায় যাতে আনন্দ উপভোগ হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি। 

এবার প্রতি মাসে কী কী বই পড়বেন, তার একটা তালিকা প্রস্তুত করুন। এ ক্ষেত্রে বন্ধুদের পরামর্শও নিতে পারেন। নোটপ্যাড, এক্সেল বা স্প্রেডশিটে বইয়ের এ তালিকা সংরক্ষণ করতে পারলে আরও ভালো। বই নির্বাচনের বেলায় লেখক ধরে পড়াটাও ভালো বিষয়। তবে সে ক্ষেত্রে একঘেয়েমি দেখা দিতে পারে। মাসে দুটি বই হলে একটি গল্প, উপন্যাস বা ফিকশন এবং অন্য একটি শিল্প, সংস্কৃতি বা ব্যবসা-সম্পর্কিত বই পড়ুন। অথবা একটি দেশি লেখক বা অন্যটি বিদেশি লেখকের বই পড়লেও অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটি বই কত দিনে শেষ করবেন তা নির্ধারণ। বইয়ের বিষয়বস্তু যদি আকর্ষণ করে, তাহলে পড়ায় গতি চলে আসে। কিন্তু যদি শক্ত ধাঁচের বই ধরে থাকেন, তাহলে মনোযোগ ও পড়ার গতি ধরে রাখতে দৈনিক কত পৃষ্ঠা পড়বেন, তা নির্ধারণ করে নিলে সুবিধা হবে। খুব ব্যস্ত থাকলেও প্রতিদিন যেন ১০-২০ পাতা পড়া হয়।

বই পড়ার সঙ্গে পরিবেশ ও সময় অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। গোছানো ঘরে বিছানায় গা এলিয়ে বই পড়লে চট করেই মনোযোগ চলে আসে। এটা অবশ্য একেকজনের মানসিকতার ওপরও নির্ভর করে। আবার অনেকে বাসে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ই-বুকে মনোযোগ দিতে পারেন বেশ। তাই বরাদ্দ ২৪ ঘণ্টা থেকে ৩০-৪০ মিনিট কেটে রেখে দিন। ওই সময়টায় শুধু বই-ই পড়বেন অন্য কাজ নয়।

বই পড়ার অভ্যাস শুরু করতে আরও একটি কাজ করা যেতে পারে, তা হলো বন্ধুদের নিয়ে বই পড়া। একটি বই বাছাই করে দু-চারজন বন্ধু মিলে পড়া শুরু করুন। নির্দিষ্ট দিন ধার্য করুন তা শেষ করতে। এরপর সবাই মিলে আলোচনা করতে পারেন সমুদয় বিষয় নিয়ে। এতে বই পড়ার প্রতি থাকবে দায়বদ্ধতা। গড়ে উঠবে আরও একটি ভালো অভ্যাস। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //