বাসায় অফিস ভাবনা

যারা চাকরি করেন, তাদের জীবনে অফিস একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রতিদিন অফিসে নানা কাজ অথবা একই কাজ বারবার টানা একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে করতে হয়। এ কারণে অফিসের কর্মঘণ্টা শেষ হলেও মস্তিষ্কে থেকে যায় অফিসের কাজের রেশ। তা ছাড়াও অনেক সময় অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততায় অথবা কর্তৃপক্ষের বাহবা পাওয়ার আশায় অনেকে বাসায় এসেও ডুবে থাকেন অফিসের কাজে। 

প্রতিদিন যারা অফিসের পরও অফিস নিয়ে চিন্তা করেন, তাদের দুশ্চিন্তা কিংবা মানসিক চাপে থাকা অস্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন গবেষণায়ও উঠে এসেছে এমন তথ্য। সম্প্রতি জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণামতে, দিনের পর দিন অফিসের পরও অফিস নিয়ে ভাবলে একজন কর্মী তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন, পাশাপাশি ব্যাহত হতে পারে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। তাই কীভাবে অফিসের পর কাজ থেকে আলাদা হওয়া যায়, সে পথ খোঁজাটা বিশেষ জরুরি। 

এটা সত্য যে, প্রত্যেকের জীবনেই কাজের গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের গুরুত্বও কিন্তু কম নয়। আমরা প্রায়শই কাজকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা পরিবারকে উপেক্ষা করে থাকি, একদমই সময় দিতে চাই না। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে মিলিয়ে ফেললে চলবে না। অফিস জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনকে সমান্তরালে রেখে কীভাবে চলবেন তা নিজেকেই ঠিক করতে হবে। ছুটির দিনে যেমন অফিসের ই-মেইল বা মেসেজ চেক করতে বসবেন না তেমনই অফিসের কোনো ঝামেলা বাসায় টেনে আনবেন না। একইভাবে অফিসে থাকাকালে বাসা, পরিবার, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভালো। যে সময়ে যেখানে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, তখন সেখানেই গুরুত্ব দিন।

বাসায় অফিস ভাবনা দূর করবেন কীভাবে
লিংকডইনের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, বেশিরভাগ কর্মী অফিসজনিত যেসব বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন তাদের বেশিরভাগই বুঝতে পারেন না কীভাবে পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন ব্যালান্স করবেন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিসের কর্মঘণ্টা, কাজ ও কাজের গুরুত্বএই পুরো বিষয়টিকে একটি সীমানার মধ্যে রাখুন। কোন সময়ে কোন কাজ করবেন, কাজটা শেষ করতে কতক্ষণ সময় লাগবে, কতক্ষণ সময় অফিসের জন্য ব্যয় করবেন তার জন্য আগে থেকেই ছক করে রাখুন। 

তাই বলে এই নয় যে, প্রতিদিন একই সময়ে অফিসের কাজ শেষ হবে। বাড়তি সময় লাগবে এটা ধরেই রাখুন। অফিসে নিজের কাজ, নিজের দায়িত্ব এটা আপনি ছাড়া কেউ আর এত ভালো বুঝবে না। আর তাই সেই কর্তব্যে কোনো রকম গাফিলতি নয়। 

শেষ সময় বা ডেডলাইনের জন্য কোনো কাজ জমিয়ে রাখবেন না। পারলে একদিন আগেই অর্পিত কাজ সম্পন্ন করুন। তাহলে অতিরিক্ত সময় কাজ করার কোনো চাপ তো থাকবেই না, বরং কাজটি আরও সুন্দর ও গুছিয়ে নিতে পারবেন, মানসিক শান্তি থাকবে।

অনেকে মনে করেন, যত বেশি কাজ করা হবে তত বেশি কর্মস্পৃহা বাড়তে থাকবে। এটা একদমই ভুল ধারণা। মনে রাখতে হবে, আপনি কোনো রোবট নন, আপনার মস্তিষ্কেরও একটি নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা আছে। প্রয়োজন আছে বিশ্রামের। তাই সময়জ্ঞান হারিয়ে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না নেমে বিরতি নিন। নিজেকে রিচার্জ করে পুনরায় শুরু করুন। তাহলেই দ্বিগুণ বাড়বে কাজের গতি।

ইদানীং অফিসের কাজের ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং বা একা অনেক কাজ সামলানো মানুষগুলো বেশ গুরুত্ব পায়। কিন্তু এই ইঁদুর-দৌড়ে শামিল হওয়ার প্রয়োজন নেই। একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলার চেয়ে বরং নির্দিষ্ট কাজই মন দিয়ে করুন। 

কাজের ক্ষেত্রে সবার আগে প্রাধান্য দিন কৌশলী হওয়াকে। যে যত বেশি কৌশলী, তার উন্নতি ততই বেশি। বেশি সময় কাজ না করে কৌশলে অল্প সময়ে কাজ করার ক্ষমতাকে শানিত করুন। 

পরিবার ও প্রিয়জনকে সময় দিন। অফিসে আসার আগে অথবা অফিস থেকে ফিরে কখন বাজার করবেন, কখন সন্তানের জন্য সময় বের করবেন, কখন পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরতে যাবেন, তা আলাদা নোট করে রাখুন। প্রয়োজনে মোবাইলের ক্যালেন্ডারে অ্যাপে রিমাইন্ডার সেট করে রাখতে পারেন। 

মাঝে মাঝে নিজেকেও সময় দিন। কিছুটা সময় প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকুন। বুক ভরে শ্বাস নিন। খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটুন। দিনে অন্তত আধাঘণ্টা মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করুন। মনে রাখবেন. অফিসের কাজের বাইরেও একটা জীবন আছে। সেটাকে উপভোগ করুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //