কর্মক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গুয়েজের গুরুত্ব

শুধু মুখের ভাষা নয়, কর্মক্ষেত্রে শারীরিক ভাষাও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চারপাশের লোকজনকে কারও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে থাকে, বার্তা দেয়। কেউ যেমনই হন না কেন তার অঙ্গভঙ্গি, চেহারার অভিব্যক্তি, হাত-পায়ের নড়াচড়া দেখে ঊর্ধ্বতন এবং অধীনস্থরা তাকে মেপে ফেলতে পারেন। তাই কর্মক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গুয়েজকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। 

বিষয়টি কাজের প্রতি আন্তরিকতার ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারে। বিশেষ করে অফিসের মিটিংয়ে বডি ল্যাংগুয়েজ নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। ধরুন, অনেকক্ষণ সিটে বসে আছেন। এতে একঘেয়েমি বা অবসাদ পেয়ে বসা স্বাভাবিক। শরীরের অসাড়তা কাটাতে এ সময় আড়মোড়া ভাঙেন বা কুঁজো হয়ে বসে থাকেন। কিন্তু এই বিষয়টি মিটিংয়ে আপনার মনোযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। মনে হতে পারে উত্থাপিত বিষয়টি সম্পর্কে উদাসীন কিংবা আগ্রহ পাচ্ছেন না। তাই মিটিংয়ে এ ব্যাপারটি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখুন। 

কথা বলার সময় নখ খোঁটা, মুঠোফোনে মনোযোগী হওয়া, পা নাচানো বা হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটাকে অভদ্রতা হিসেবেই ধরা হয়। চাকরির ইন্টারভিউয়ে কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তার সামনে বসে এমন শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করলে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আসা খুব স্বাভাবিক। তাই কথা বলার সময় বিষয়গুলো এড়িয়ে এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে যেন বোঝা যায় সামনের জনের কথা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। 

চলাফেরার মধ্যেও প্রকাশ পেতে পারে ব্যক্তিত্ব। তাই কর্মস্থলে সব সময় দৃঢ়ভাবে হাঁটার চেষ্টা করুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস এবং কর্ম ক্ষমতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা জন্ম নেবে সবার মধ্যে। 

কথা বলার সময় অনেকে ভ্রু কুঁচকে থাকেন এবং মুখ গম্ভীর করে রাখেন। এতে সহজেই সহকর্মীরা ধরে নেবে আপনি রাগী, বদমেজাজি, অহংকারী। যা কর্মক্ষেত্রে কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কথা বলার সময় অবশ্যই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে আয়নায় দেখে কিংবা নিজে নিজে অনুশীলনের মাধ্যমে এই ক্ষতিকর দিকগুলো পরিহার করার চেষ্টা করুন। 

অনেকে কথোপকথনের সময় বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে রাখেন। এতে বক্তা কথা বলায় উৎসাহ হারান। এ ছাড়া দ্রুত পলক ফেলা অনিশ্চয়তা বা উদ্বেগ নির্দেশ করতে পারে। আঙুলে টোকা দেওয়া অধৈর্যতা বা একঘেয়েমির চিহ্ন। 

এ ছাড়া বিতৃষ্ণা, রাগ, ভয়, দুঃখ, সুখ, বিস্ময় এবং অবজ্ঞা-এই সাতটি অভিব্যক্তি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে মানুষের চেহারায় প্রকাশ পায়। যা ব্যক্তি সম্পর্কে তৎক্ষণাৎ ধারণা তৈরি করে দেয়। সামনের জন উপলব্ধি করতে পারেন কিছু লুকাচ্ছেন কিংবা তার সম্পর্কে অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। যা অনেক সময় ক্লায়েন্ট কিংবা সহকর্মীর জন্য বিব্রতকর হতে পারে। 

আবার কখনো কখনো এসবের ইতিবাচক এবং কার্যকরী ব্যবহার যোগাযোগকে আরও প্রাণবন্ত করে। সে কারণেই বিষয়গুলো ঠান্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা জরুরি। 

শারীরিক ভাষার মতোই পোশাকও কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব বহন করে। তাই নির্দিষ্ট ড্রেস কোড না থাকলেও অফিসের পোশাকের ক্ষেত্রে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া উচিত। চাইলেই যে কোনো পোশাক পরে কর্মক্ষেত্রে চলে যাওয়াটা ঠিক নয়। অবশ্যই কুঁচকে যাওয়া জামা, খুব রঙ-চঙয়ে শাড়ি, খোলামেলা কিংবা টাইট বা ক্যাজুয়াল পোশাক পরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে সেখানে কেউ বন্ধু নয়, বরং যোগ্যতা দিয়েই সেখানে আপনাকে মাপা হয়। তাই শারীরিক ভাষার পাশাপাশি পোশাকের দিকেও নজর দিতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //