বন্যার পর যা করণীয়

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সবারই উদ্বেগ থাকে। তবে বিপদের আশঙ্কা বেশি থাকে পানি নেমে যাওয়ার পর। কেননা বন্যায় আশ্রয়, বাসস্থান ঝুঁকিতে থাকলেও বন্যার পর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয় অঞ্চলগুলোতে। অনেকেই অনিরাপদ পানি পান বা খাবার খেয়ে থাকেন। ফলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। একই সঙ্গে মৌসুমি অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। বন্যার পানিতে হতে পারে চর্মরোগও। এ কারণেই বন্যাপরবর্তী সময়ে বেশি সতর্কতা মেনে চলা উচিত। 

প্রথমেই জোর দিতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। বন্যায় দূষিত পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়িতে। সে কারণে পানি নেমে যেতেই ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, জীবাণুনাশক দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। পানি নেমে গেলে পরিবেশ ও ঘরবাড়ি স্যাঁতসেঁতে থাকে। যা রোগবালাই ছড়ানোর উপযোগী। 

ব্যবস্থা করতে হবে বিশুদ্ধ পানির। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে গেলে এক কলস পানিতে তিন থেকে চার চা চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে নিয়ে টিউবওয়েলের ভেতর সেই পানি ঢেলে আধা ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। তারপর একটানা আধা ঘণ্টা চেপে পানি বের করে ফেলে দিতে হবে। এরপর সেই পানি খাওয়ার উপযোগী হতে পারে।

বন্যায় খড়কুটো থেকে শুরু করে ভেসে আসে নানা কিছু। থাকে গবাদিপশু থেকে বিভিন্ন পশু-পাখির মরদেহ। পানি নেমে গেলে প্রথমেই মৃত পশু-পাখির দেহ মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। অন্যথায় বায়ু ও পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। বন্যার পরে মানুষ, গবাদিপশুর কৃমি-আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই বছর কিংবা এর নিচের শিশু ব্যতীত সব মানুষ এবং গবাদিপশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। 

ক্ষেত-খামারে যেতেও অবলম্বন করতে হবে সাবধানতা। এ সময় সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। চাষাবাদের সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। হাঁটু পর্যন্ত শক্ত বুটজাতীয় জুতা পরা উচিত যেন সাপের কামড় থেকে নিরাপদ থাকা যায়। 

বন্যা পরবর্তী সময়ে যে বিষয়গুলোতে বেশি সাবধান থাকতে হবে তার মধ্যে একটি বৈদ্যতিক খুঁটি। প্লাবিত ভূমিতে খুঁটি হতে বৈদ্যুতিক তার বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে থাকতে পারে। এ ছাড়া বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশের ফলেও ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। ফলে বন্যার পর বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি। 

একই সঙ্গে জরুরি নম্বরগুলো সংগ্রহে রাখতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে অ্যাম্বুলেন্স, জেলা প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা কিংবা উপজেলা হাসপাতালের নম্বর মোবাইলে বা কাগজে লিখে সংরক্ষণ করা উচিত। বন্যা শুধু শারীরিক ক্ষতিই করে না বরং মানসিক চাপও তৈরি করে। এ জন্য দরকার ধৈর্য ও সাহস। বন্যা-পরবর্তী সময়ে সব ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে সুস্থ থাকতে হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //