স্যাম্পো জেনারেশন

আপনি কখনো ‘স্যাম্পো জেনারেশন’ কথাটি শুনেছেন? না শুনতে পারেন! কারণ ‘স্যাম্পো জেনারেশন’ কথাটি এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। সে দেশে এই নামটি বহুল পরিচিত। তবে এটা শুনতে ভালো লাগলেও মোটেও ইতিবাচক কোনো বিষয় নয়! এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোরিয়ান তরুণদের হতাশা! কিন্তু কেন? 

আমরা দক্ষিণ কোরিয়াকে চিনি বিশ্বের উন্নত একটি দেশ হিসেবে। যে দেশটি শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতি, প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। কিন্তু কথায় আছে আলোর বিপরীতে থাকে অন্ধকার। তেমন দক্ষিণ কোরিয়ার চাকচিক্যের গল্পে ঢাকা পড়ে দেশটির আর্থ-সামাজিক বৈষম্য। মূলত সেই গল্প হলো ‘স্যাম্পো জেনারেশন’। ২০১১ সালে দেশটিতে ‘স্যাম্পো জেনারেশন’ ধারণার উদ্ভব হয়। যার মূল শব্দটি হলো samposedae, ইংরেজিতে অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘Three giving-up generation’।

এই ধারণাটি দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ প্রজন্মকে বোঝানো হয়েছে। যারা জীবনযাপনের অতিরিক্ত ব্যয়, বেকারত্বের কারণে বিয়ে, সন্তান নেওয়া ও সঙ্গী নির্বাচন করতে পারে না। মূলত কোরিয়ার এই প্রজন্মকে বলা হচ্ছে স্যাম্পো জেনারেশন। আর এই কারণেই সেখানে জন্মহার অনেক কম এবং প্রবীণের সংখ্যার গ্রাফটা দিন দিন উচ্চমুখী হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার এখন এক শতাংশের নিচে। বিপরীতে ২০৫০ সালে বিশ্বের মধ্যে দেশটির প্রবীণ জনসংখ্যার পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ।

দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত দেশে স্যাম্পো জেনারেশনের আধিক্য কেন? কারণ সেখানকার তরুণদের ব্যাপক প্রতিযোগিতা করে বড় হতে হয়। সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয় স্কুলজীবন থেকে। কোরিয়ার স্কুলগুলোতে প্রতিযোগিতা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত চাপের মধ্যে রাখা হয়। এরপর চাকরির বাজারে এসে প্রতিযোগিতা যায় কয়েক গুণ বেড়ে। ফলে অনেক তরুণ হতাশ হয়ে পড়ে। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। এখানে উল্লেখ করা দরকার, দক্ষিণ কোরিয়ার আত্মহত্যার হার বেশ আশঙ্কাজনক। এ জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘হেল জোসেওন’ বলা হয়। ‘জোসেওন’ দক্ষিণ কোরিয়ার আগের নাম। অর্থাৎ দেশটিকে নরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

ন্যাশনাল ইয়ুথ পলিসি ইনস্টিটিউটের জরিপে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত চাপে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার কথা ভেবেছে। এই জরিপটি করা হয়েছিল ২০১৯ সালে।

আবার দেশটির করপোরেট সেক্টরের কর্মীদের অতিরিক্ত চাপে রাখা হয়। বেশি সময় কাজ করানো হয়। কিন্তু পরিশ্রমের তুলনায় বেতন দেওয়া হয় কম। এর কারণ দেশটির নাগরিকদের ব্যয়ের চেয়ে আয় কম। এতে তারা দেশটির উন্নত জীবনযাপনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খায়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্য দেশটির বহুজাতিক গ্রুপ অব কোম্পানিকে দায়ী করা হয়। কারণ সেখানকার বড় বড় কোম্পানিগুলো বেশির ভাগ বাজার দখল করে রেখেছে। এতে ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলো খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি।

ফলে বেশির ভাগ চাকরি বড় কোম্পানির হাতে থাকে। কিন্তু অনেক কোম্পানি দেশের বাইরে থেকে কর্মী সংস্থান করে। তাই কোরিয়ান তরুণদের চাকরির সুযোগ কমে যায়। আর যে চাকরিগুলো থাকে, সেখানে তাদের ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়। স্বাভাবিকভাবেই বড় একটি অংশ চাকরি পায় না। এতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা তৈরি হয়। ফলস্বরূপ উন্নত জীবনের অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। এ কারণে তারা বিয়ে করা কিংবা সন্তান নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রজন্মকে বলা হচ্ছে ‘স্যাম্পো জেনারেশন’।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh