আল-জাজিরার তথ্যচিত্র প্রদর্শনে এলাহাবাদ আদালতের নিষেধ

ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্ট আল-জাজিরার একটি তথ্যচিত্র দেশটিতে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এই ডকুমেন্টারিটি মূলত দেশটির মুসলিমদের ওপর হিন্দু উচ্চ পদস্থদের চালানো নানা প্রতিহিংসা ও অত্যাচারের ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছে।  

‘ হু লিট দ্যা ফিউজ ‘ শিরোনামে এই ডকুমেন্টারি যেন প্রদর্শন না করা হয় তার জন্য জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয়েছিল আর এ প্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিয়েছেন হাইকর্টের বিচারপতি অশ্বিনী কুমার মিশ্র এবং বিচারপতি অশুতোষ শ্রীবাস্তবের দ্বৈত বেঞ্চ।

আদালত বলেন, এটি প্রচার হলে পরিণাম ভাল হবে না। আর তাই বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিচ্ছে বলেও আদালত জানায়। 

তবে দায়ের করা মামলার শুনানি পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। যদিও তথ্যচিত্রটিকে সরাসরি নিষিদ্ধ করেনি আদালত।

এর আগে যাতে এই তথ্যচিত্রটি কোনোভাবেই দেশে প্রদর্শিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। দেশের সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেও এসময় বলা হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে।

আল-জাজিরা জানায়, তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনী আটকাতে জনস্বার্থ মামলাটি করেন সুধীর কুমার নামক এক সমাজসেবক। তার যুক্তি, এই তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হলে দেশর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির আবহাওয়া নষ্ট হওয়ার সঙ্গে দেশটির ধর্মনিরপেক্ষতার সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে।  

তাছাড়া এই ডকুমেন্টারির জেরে দেশ অশান্তি ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মামলাকারী। 

বাদির দাবি, ডকুমেন্টারিতে ভারতের মুসলিমদের যে অবস্থা দেখানো হয়েছে সেই  বিষয়বস্তুর সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এদিকে এই মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কৌসূলি মামলাকারীর বিরোধিতা করেননি।  

তার দাবি, তথ্যচিত্রটি ভারতে দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন বা সার্টিফিকেটও নেয়নি আল জাজিরা। এদিকে মামলার শুনানিতে আল-জাজিরার পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।  

তথ্যচিত্রে বিজেপি শাসিত আসাম রাজ্যের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৭ লাখ মুসলিমের ওপর তাদের আধিপত্যের বিষয়াদি তুলে ধরা হয়। ২০১৯ সালের নাগিরক আইন অনুযায়ী বাংলাভাষাভাষীরা তাদের নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে আতংকিত বলেও দেখানো হয়। এমনকি তাদেরকে জোরপূর্বক পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য হুমকি দেওয়ার দৃশ্য উঠে আসে তথ্যচিত্রে। 

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে দেখা যায়, মুসলিমদের বেশ কিছু সম্পত্তি গুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য। 

তবে এ বিষয়ে বিজেপির এক মূখপাত্র এসমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দু- মুসলিমদের সম অধিকারে বিশ্বাসী। 

এর আগে গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর সম্পৃক্ততা তুলে ধরে বিবিসির একটি তথ্যচিত্রের ব্যাপারেও একইরকম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির আদালত। সেখানে দেখা যায়, ২০০২ সালে মোদী গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এক দাঙ্গায় ১ হাজারেরও বেশি মুসলিম নিহতের ঘটনা ঘটে। 

উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে বিবিসির নয়াদিল্লী ও মুম্বাই কার্যালয়ে তল্লাশী চালায় দেশটির আয়কর বিভাগ। অভিযোগে বলা হয়, বিবিসি কর ফাঁকির দায়ে অভিযুক্ত। যদিও বিবিসি তা অস্বীকার করে তথ্যচিত্র প্রদর্শনের জন্য সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ অভিযান চালিয়েছে বলে উল্লেখ করে। 

সূত্র: আল-জাজিরা  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //