তদন্তের স্বার্থে সাংবাদিকের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করা যাবে না: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

কলম, নোট বুক, লেখার প্যাড, ফোন বুক- এসব উপাদান একসময় বেশিরভাগ সাংবাদিকের কাছে সংরক্ষিত থাকত সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে। কালের আবর্তে তা পরতিবর্তিত হয়ে আধুনিক যুগে গণমাধ্যমকর্মীরা ব্যবহার করেছেন মোবাইল,  ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি। আর এগুলিতেই থাকে গোপন তথ্য, খবর সরবরাহকারীর নাম, যাদের সাংবাদিকতার পরিভাষায় বলা হয় ‘সোর্স’। অথচ যে কোনও তদন্তেই পুলিশ-সহ অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে দিনের পর দিন আটকে রাখেন। 

এবারে এমন বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন, তদন্তের নামে এজেন্সিগুলো চাইলেই মোবাইল, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। 

দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের দুই বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল এবং সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ কেন্দ্রকে বলেছে, বাজেয়াপ্ত কোন কোন ক্ষেত্রে করা যাবে, সে ব্যাপারে কেন্দ্রকে এক মাসের মধ্যে একটি বিধি তৈরি করতে হবে। দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছেন, সরকার যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই তালিকা প্রস্তুতে ব্যর্থ হয় তবে শীর্ষ আদালতই তা তৈরি করে দেবে। 

এসময় তদন্তের নামে এই সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস সব সময় বাজেয়াপ্ত করা যাবে না বলেও আদালতের নির্দেশে জানানো হয়।

একটি মামলায় এই প্রসঙ্গে দুই বিচারপতি বলেন, খবরের সোর্স বা সূত্র অনেক সময় সাংবাদিকের গোপন রাখতে হয়। মোবাইল, ল্যাপটপে অনেক ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর থাকে যা সাংবাদিক গোপন রাখতে চান। পুলিশ, ইডি, সিবিআই তদন্তের নামে প্রথমে এসব বাজেয়াপ্ত করে নেয়। 

ফাউন্ডেশন অব মিডিয়া প্রফেশনালের জনস্বার্থ মামলায় আদালত জানান, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না যে তদন্তের জন্য সর্বদা সাংবাদিকের মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত জরুরি। 

এর আগে সম্প্রতি ভারতের দুটি ঘটনায় তদন্তের নামে সাংবাদিকদের অধিকার হরণের অভিযোগ ওঠে। বিবিসির বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির তদন্তেও দেখা গিয়েছে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাময়িকভাব নিয়ে নেওয়া হয়। 

গত মাসে নিউজক্লিক সংস্থার বিরুদ্ধে দেশ বিরোধী চক্রান্তে যুক্ত থাকার অভিযোগের তদন্তেও বহু সাংবাদিকের মোবাইল, ল্যাপটপ খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। এছাড়া একাধিক মামলায় রাজ্যে রাজ্যে পুলিশ-সহ রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একই পথে হেঁটেছেন। ফলে সাংবাদিকদের গোপন সোর্সদের নাম-পরিচয় চলে যায় তদন্তকারীদের হাতে। ফলশ্রুতিতে সেইসব লোকেরা বিপদে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সূত্র: দি ওয়াল

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //