জনপ্রিয় অ্যাপল ডেইলি’র স্বত্বাধিকারী

হংকং আদালতে বিচারের মুখোমুখি মিডিয়া টাইকুন জিমি লাই

হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে কথা বলা দেশটির মিডিয়া টাইকুন নামে পরিচিত ৭৬ বছর বয়সী জিমি লাই’কে বিচারের জন্য দেশটির আদালতে তোলা হয়েছে। এ সময় আদালত চত্বর ও আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। হংকংয়ের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে উত্তাল জনতার বিক্ষোভ মিছিলের সময় তার সংবাদ মাধ্যম ‘অ্যাপল ডেইলি’ জোরালো ভূমিকা নেয়ায় ২০২০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘অ্যাপল ডেইলি’ চীন বিরোধী হিসেবে দেশটির জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পরে ২০২১ সালে জোরপূর্বক পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। 

সিএনএন জানিয়েছে, আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় নিরাপত্তা আইনভঙ্গ, বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে অসদাচরণ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে আদালতে নেয়া হয়েছে জিমি লাই’কে। এসময় বলা হয়, যদি তার দোষ প্রমাণিত হয়, তবে সর্বোচ্চ সাজা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে লি’র। 

আদালতে নেয়ার সময় ধূসর স্যুট ও নীল রঙের শার্ট পরিহিত জিমি লি বাইরে অপেক্ষামান তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাতনেড়ে সাড়া দেন। এসময় তাকে চারজন নিরাপত্তাকর্মীর পাহারায় আদালতের দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।  

জানা গেছে, তার বিচার প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ ৮০ দিনের মধ্যে শেষ করা হতে পারে। এদিকে ১৯৯৭ সালে শহরটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে চীনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর হংকংয়ের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে জিমি লাইয়ের বিচার প্রক্রিয়াটি হতে যাচ্ছে দেশটির সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল কোনো ব্যক্তির মামলা। এমনকি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এটি হংকংয়ে স্থাপন করতে যাচ্ছে নতুন এক নজির। যা দেশটির আইনি ব্যবস্থাকেই পরিবর্তনের এক নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

২০১৯ সালে দেশটিতে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হলে ১২টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে অনেক বিক্ষোভকারীকেই গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় নিরাপত্তা বাহিনী। এসময় অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যান। 

লাইয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তার দৈনিক পত্রিকা অ্যাপলে প্রকাশিত নিবন্ধটি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল। আরও বলা হয়, এ কারণে দেশটি বিদেশি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। এদিকে তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন লাই। 

এর আগে ২০১৯ সালের আন্দোলনের সময় বেইজিং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ এনে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে। এদিকে এ আইনের অধীনে অন্যান্য মামলার মত এখানে থাকছে না জুরি বোর্ড। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের তিনজন বিচারক এই মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে হংকং সরকার অনুমতি দিয়েছে। 

তবে দেশটির আদালত লাইয়ের পক্ষে বিদেশি আইনজীবী দেয়ার অনুমতি দিলেও দেশটির সরকার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে তা নাকচ করে দিয়েছে। এর আগে লাই তার পক্ষে ব্রিটিশ মানবাধিকারের একজন আইনজীবীকে নিয়োগের আবেদন জানালে না নাকচ করে দেয়া হয়। 

এদিকে লাইয়ের ছেলে সেবাস্টেইন লাই লন্ডন সিএনএনকে  জানান, আমি মনে করি আমার বাবা এখনও মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্ত। 

"তবে এটা ঠিক বয়সের বিষয়টি কেউ এড়াতে পারে না। আর সেই প্রেক্ষিতে বয়সের বিচারে তিনি সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন" বলে জানান সেবেস্টেইন লাই। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তার পিতার মুক্তির প্রচারণা চালিয়ে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে জিমি লাইয়ের মুক্তির বিষয়ে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ নাগরিক সেবেস্টাইন লাই। 

ওইসময় ট্রায়াল শুরুর আগে ক্যামেরন বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন আছেন বলে তাকে জানান। একইসঙ্গে লাইয়ের মুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তার আলাপ হয়েছে বলে জানান ক্যামেরন। 

তিনি বলেন, একজন নির্ভীক, সাহসী ও সত্যবাদী সাংবাদিক হিসেবে জিমি লাই’কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই লক্ষ্য করেছে হংকং প্রশাসন। যাতে করে দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ না থাকে। 

এদিকে লাইয়ের বিচার বন্ধ করে তাকে মুক্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট হংকং কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমাদের এমন পদক্ষেপে চীনা সরকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। 

এ বিষয়ে গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র মাও নিং বলেন, জনগণের জানা আছে জিমি লাই একজন জঘন্য ব্যক্তি। চীন অধ্যুষিত হংকংকে অস্থির করে তুলতে তার ভূমিকা ছিল। এমনকি দেশটিতে দাঙ্গার জন্যও লাই দায়ী। 

লাইয়ের মামলার বিষয়ে সিএনএনের পক্ষ হতে তার লিগ্যাল টিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বিচারের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চীনার আঞ্চলিক উপ-পরিচালক সারাহ ব্রুকস উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিচার বন্ধের জোর দাবি জানান। এছাড়াও দ্যা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) এশিয়া প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী বে লি বলেন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন আজ হংকংয়ে   বিচারের মুখে দাঁড়িয়েছে। 

উল্লেখ্য, চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তরের ঠিক দুই বছর আগে ১৯৯৫ সালে লাই ‘অ্যাপল ডেইলি’ প্রতিষ্ঠা করেন।  

সূত্র: সিএনএন 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //