উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম মুক্ত: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যম যেমন স্বাধীন এবং মুক্তভাবে কাজ করছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তা অবশ্যই একটি উদাহরণ। একইসঙ্গে অনেক উন্নত দেশের তুলনায়ও এদেশের গণমাধ্যম মুক্ত।’

‌সোমবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সচিবালয়ে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি, অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গীতিকবি মিজান মালিকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের পোস্টার’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের অপরিসীম শক্তি। যার মুখে ভাষা নেই তাকে যেনো ভাষা দিতে পারে, যে স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে তাকে স্বপ্ন দেখাতে পারে, যার কাছে ক্ষমতা নেই, তাকে ক্ষমতাবান করতে পারে।’

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো পত্রিকায় যদি ভুল সংবাদ পরিবেশিত হয়, তার প্রতিবাদ জানালে সংবাদটা যে মাত্রায় পরিবেশিত হয়েছিল প্রতিবাদটা সেই মাত্রায় ছাপানো হয় না। এদেশে ভুল, অসত্য সংবাদ পরিবেশনের জন্য পত্রপত্রিকার কোনো জরিমানা গুণতে হয় না, যেটি উন্নত দেশে গুণতে হয়। উন্নত দেশগুলোতে কোনো ভুল, সংবাদ অসত্য সংবাদ বা কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, হস্তক্ষেপ হয়েছে এমন সংবাদ পরিবেশিত হলে কেউ যখন আইনের আশ্রয় নেন, তাদেরকে জরিমানা গুণতে হয়। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না, নিয়মিতই সেটি হয়।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে পৃথিবীর এক সময়কার সবচাইতে বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড-এ একটি অসত্য সংবাদ পরিবেশিত হওয়ার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক বছর আগে বিবিসিতে একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশিত হওয়ার কারণে বিবিসির পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। আমাদের দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটে না।’

মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমকে বহুমাত্রিক সমাজের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশ ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজের বিকাশ সম্ভব নয়। সে বিশ্বাসেই আমাদের সরকারের হাত ধরে দেশে বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারের যাত্রা শুরু হয়েছে, যেটি আগে ছিল না।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় গ্রেফতারের বিষয়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংগঠনের বিরূপ মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এদেশের ও বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম নিয়ে যে সমস্ত সংগঠন বিবৃতি দেয় তাদের সঙ্গে একমত হওয়ার কারণ নেই। তারা নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। আমাদের কাছে বা তথ্য কমিশনের কাছেও কোনো তথ্য চায় না। তাদের ঢালাও মন্তব্য ঠিক নয় এবং আমরা এগুলোর সঙ্গে একমত নই।’

ড. হাছান বলেন, ‘পৃথিবীতে আগে ডিজিটাল বিষয়টা ছিল না অর্থাৎ ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও যখন ছিল না, তখন সেখানে নিরাপত্তার জন্য কোনো আইনেরও প্রয়োজন ছিল না। যখন সেটি এসেছে তখন আইনেরও অবশ্যই প্রয়োজন আছে। সেই কারণে বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ করা হয়েছে। ভারত-পাকিস্তানসহ পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশে এ ধরনের আইন করা হয়েছে।’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিজিটাল সিকিউরিটির জন্য সাইবার সিকিউরিটি ২০১৫, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৯ ফ্রেমওয়ার্ক ল’ করেছে। যেটির অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেম্বার স্টেটরা প্রত্যেকে আবার নিজেরা আইন করেছে। অস্ট্রেলিয়া সাইবার ক্রিমিনাল অ্যাক্ট ২০০১, সিঙ্গাপুর সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ করা হয়েছে, পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল সবদেশেই ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইন করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সারাদেশে সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। একজন সাংবাদিক, লেখক, কৃষক, গৃহিণী, সাধারণ মানুষ, রিকশাওয়ালা, চাকরিজীবী, শ্রমিক, রাজনৈতিককর্মী সবারই ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এই আইন। অনেক সাংবাদিক এই আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলা করেছেন। সুতরাং এই আইন যুগের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এই আইন। এ আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয়, কোনো সাংবাদিক যেন এই আইনের মাধ্যমে হয়রানির স্বীকার না হয়, সেটির সঙ্গে আমি অবশ্যই একমত।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের ওপর বাংলাদেশের মানুষের যথেষ্ট আস্থা আছে, না থাকলে এতো টেলিভিশনও চলতো না, এতোগুলো পত্রিকাও বের হতো না, পাঠক সংখ্যাও বাড়ত না। সম্প্রতি কিছু কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে যেভাবে আসার কথা ছিল সেভাবে আসে নাই বিধায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয়নি।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অর্থ-বিত্ত-বৈভব-শক্তি-ক্ষমতায় যে যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন, সত্য সংবাদ অবশ্যই পরিবেশিত হওয়া প্রয়োজন, সেটি যার বিরুদ্ধেই হোক। একইসঙ্গে গণমাধ্যমের দায়িত্ব শুধুমাত্র নেতিবাচক সংবাদই প্রচার করা নয়, সমাজের সার্বিক চিত্র পরিস্ফুটন করা। এই করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদের অভিযাত্রা থমকে দাঁড়ায়নি-এই সাফল্যের গল্পগুলো গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আশা প্রয়োজন। তাহলে জাতি আশাবাদী হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে কবি ও সাংবাদিক মিজান মালিক, সাংবাদিক নেতা খায়রুল আলম, সাংবাদিক সাঈদ আহমেদ, আলমগীর স্বপন অংশ নেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //