কে এই দানিশ

আফগানিস্তানের কান্দাহারে তালেবান ও আফগান বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ভারতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রধান আলোকচিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। 

জানা যায়, অশান্ত কান্দাহারের ছবি তুলতে কয়েকদিন আগেই সেখানে গিয়েছিলেন দানিশ। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গী হয়ে তিনি বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) স্পিন বোলডাক জেলায় তাদের গাড়িবহরটি তালেবান হামলার মুখে পড়ে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, তালেবানের হামলায় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভারতে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুনদজাই।  

শুক্রবার (১৬ জুলাই) এক টুইট বার্তায় ফরিদ বলেন, গত রাতে কান্দাহারে আমার বন্ধু দানিশ সিদ্দিকীর নিহত হওয়ার খবরে আমি খুবই শোকাহত। পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী ভারতীয় এই সাংবাদিক আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে অবস্থান করছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে কাবুলে যাওয়ার সময় তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তার পরিবার ও রয়টার্সের প্রতি সমবেদনা।

অবশ্য টুইটারে এক সাংবাদিকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতেই তালেবানের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন দানিশ। তিনি আফগান সেনা শিবিরেই ছিলেন। আফগানিস্তানের বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, দানিশের ওপর তালেবানের সদস্যরা যখন হামলা চালায়, তখন তিনি এক দোকানির সথে কথা বলছিলেন। তাকে আহত অবস্থায় শিবিরে রেখে আফগান সেনারা তালোবান বিরোধী অভিযানে শুরু করে। কিন্তু শুক্রবার সকালে ফের তালেবানের হামলার মুখে পড়ে আফগান সেনারা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দানিশের।  

দানিশই ভারতের প্রথম পুলিৎজার-জয়ী ফটো সাংবাদিক। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ছবি তুলে সহকর্মী আদনান আবিদির সাথে ফিচার ফটোগ্রাফিতে ২০১৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের রয়টার্সের আলোকচিত্রীদের দলটির প্রধান ছিলেন দানিশ। 

পুলিৎজারজয়ী এই সাংবাদিকের মৃত্যুর পর রয়টার্সের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্রিডেনবার্গ ও বার্তা সংস্থাটির এডিটর ইন চিফ আলেসান্দ্রা গ্যালোনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমরা আরো তথ্য জানার চেষ্টা করছি। এ জন্য সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দানিশ একজন অসাধারণ সাংবাদিক ছিলেন।’ 

বয়সের তুলনায় দানিশের এই চলে যাওয়া বেমানান। ৪০ বছর বয়সী দানিশ ছিলেন মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  অর্থনীতিতে  স্নাতক শেষে গণযোগাযোগ বিষয়ে একটি কোর্স করেন। এরপর টেলিভিশন সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দানিশ সিদ্দিকী। যদিও পরবর্তীতে চিত্র সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে শিক্ষানবীশ আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। এর ছয় বছরের মধ্যেই যান ইরাকের মসুলে, যুদ্ধের ছবি তুলতে। কর্মদক্ষতা দিয়ে অনায়াসেই রয়টার্সের প্রধান চিত্র সাংবাদিকের পদ পান দানিশ।  

এরপর ক্যারিয়ারের ঝুলিতে দুর্র্ধষ সব ঘটনাকে ফ্রেমবন্দি করার পুরস্কার। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের অনেক ঘটনা কভার করা এ সাংবাদিকের ক্যামেরায় আফগান ও ইরাক যুদ্ধের পাশাপাশি হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলন, নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্প, উত্তর কোরিয়ার ম্যাস গেইমস, দিল্লির দাঙ্গা, ভারতের কোভিড পরিস্থিতি ও সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন-যাপনও উঠে এসেছে। দানিশের ছবি যেন বাস্তবের দলিল। ছবিগুলো মানুষকে বিস্মিত করেছে, ভাবনার জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে ফ্রেমই হয়ে উঠেছে শব্দ, বাকি সব শব্দহীন। 

রয়টার্স ছাড়াও তার এসব ছবি বিশ্বের বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্রিকা, স্লাইড শো ও প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //