কে ছিলেন আবু বকর আল-বাগদাদি?

জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদির আসল পরিচয় কী তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বাগদাদি তাঁর আসল নাম নয় বলে মনে করা হয়।

বাগদাদির আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ আল-বদরি। ১৯৭১ সালে ইরাকের ছোট্ট শহর সামারায় একটি সুন্নি পরিবারে তাঁর জন্ম।

পরিবারের ধর্মীয় পরিবেশ জোরাল প্রভাব ফেলেছিল বাগদাদির উপর। অল্প বয়সে গভীরভাবে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কোরানিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

জানা যায়, এই সময়েই বাগদাদ শহরের কাছে একটি মসজিদে শিশুদের কোরআন শিক্ষাও দিতে শুরু করেন তিনি। সেইসঙ্গে চলতে থাকে তাঁর ফুটবল চর্চাও। ক্লাব ফুটবলে রীতিমতো স্টার হয়ে উঠে ছিলেন বাগদাদি।

ইরাকে মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন বাগদাদির চাচা। তাঁর হাত ধরেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়ে মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন বাগদাদি। তবে শুধুমাত্র সেই গণ্ডিতেই আটকে থাকেননি বাগদাদি। ২০০০ সাল নাগাদ সালাফি জিহাদিদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। 

মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যেই আফগানিস্তানে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেন বাগদাদি। নব্বই-এর দশকে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ছাত্র ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনী যখন ফের ইরাকে অভিযান শুরু করে তখন বাগদাদি অবশ্য পুরোদস্তুর জঙ্গি। ২০০৪ সালে তাঁকে প্রথম ও শেষবারের জন্য গ্রেপ্তার করেছিল মার্কিন বাহিনী। তাকে পাঠানো হয় বুক্কা ব্যাম্পে, সেখানে প্রায় ১০ মাস কাটান বাগদাদি।

নানা সূত্র থেকে জানা যায়, খুব কম কথা বলতেন বাগদাদি। বন্দি থাকাকালীন বেশিরভাগ সময়েই ধর্মীয় চর্চাই চালিয়ে যেতেন তিনি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর নেতাদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ঘটে। বুক্কা ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ইরাকের আল কায়দার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাগদাদি। যদিও পরে ওই জঙ্গি সংগঠন ভেঙে দিয়ে তার নাম রাখা হয় ইসলামিক স্টেট। 

সেই সূত্রপাত। বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে এক জায়গায় আনার ক্ষমতা, ধর্মীয় পড়াশোনা এই সমস্ত কিছুই বাগদাদিকে নেতা হিসেবে উঠে আসতে দারুণ সাহায্য করেছিল। জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয় সাদ্দাম হুসেনের বাথ পার্টির একাধিক সদস্য ও ইরাকি সরকারের সেনাকর্তাদের অনেকেই। 

মধ্য-এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্টিফেন্সের কথায়, ‘সাদ্দাম হুসেনের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কেমনভাবে কাজে লাগাতে হয় তা তিনি (বাগদাদি) ভালই জানতেন। নিজের নিরাপত্তা নিয়েও যথেষ্ট খুঁতখুঁতে ছিলেন বাগদাদি।’

২০১০ সালের এপ্রিল মাসে বাগদাদিকে নতুন আমির ঘোষণা করা হয়। তখনো আল কায়দার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পর্ক টিকে ছিল।  ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভি সিলের অপারেশন নেপচুন স্পিয়ারে নিহত হন আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। তারপর আল কায়দার দায়িত্ব নেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। কিন্তু তত দিনে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পিছু হঠতে শুরু করেছে আল কায়দা। বদলে সেই জায়গা দখল করে নিতে থাকে ইসলামিক স্টেট। তবে তখনো আল কায়দা ছেড়ে বেরিয়ে আসেনি তারা।

ভাঙনটা শুরু হয় আল নুসরা নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনকে ঘিরে। নুসরার নেতারা সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিল। কিন্তু তার বদলে নিজের ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তোলাই প্রথম পছন্দ ছিল বাগদাদির। সেই সঙ্গে দখল করা এলাকায় কঠোর ধর্মীয় আইন চালু করাও ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ নিয়েই আল কায়দায় সঙ্গে তাঁর সংঘাত শুরু হয়। আইএসকে জঙ্গি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে আল কায়দা। তাতে কার্যত শাপে বর হয় বাগদাদির।

আল কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর পরই, ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকা দুর্বার গতিতে দখল করে নেয় আইএস জঙ্গিরা। ২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করে নেয় আইএস। এই সময়েই নিজেকে ‘খলিফা’ হিসাবে ঘোষণা করেন বাগদাদি। শুরু থেকেই একের পর এক নৃশংসতার নজির তৈরি করেছে আইএস। এলাকা দখলের পর গণহত্যা, নির্মমভাবে অত্যাচারের কোনো নিদর্শনই বাদ রাখেনি তারা। সেই সঙ্গে ব্যাংক, তেলের খনি-সহ বহু সরকারি সম্পত্তিও দখল করে নেয় তারা। 

২০১৪ সালে মসুলে ওই উপস্থিতির পর বাগদাদিকে আর কখনোই দৃশ্যপটে দেখা যায়নি। পরের বছর এক প্রতিবেদনে মার্কিন বাহিনীর অভিযানে এআইএস প্রধান গুরুতর আহত হয়ে শয্যাশায়ী বলে খবর বের হয়।

২০১৭ সালে ফের তাঁর আহত হওয়ার খবর ছড়ায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। ২০১৮ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশ হাতছাড়া হওয়া আইএস বাগদাদির একটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করে। ওই রেকর্ডে এ জঙ্গীনেতাকে তার বাহিনীর পিছুহটার কথা স্বীকার করতে শোনা যায়।

চলতি বছর আইএস ‘বাগদাদির একটি ভিডিও’ প্রকাশ করে। ওই ভিডিওতে নিজেকে বাগদাদি দাবি করা এক ব্যক্তিকে শ্রীলঙ্কায় ইস্টার উৎসবে বোমা হামলাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। -বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //