লেবাননে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, আহত ৪০০০

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিশাল এক বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরো চার হাজারের বেশি লোক আহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ঘটা এই জোড়া বিস্ফোরণে বহু ঘরবাড়ি ও গাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

লেবাননের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান বলেছেন, অত্যন্ত বিস্ফোরক রাসায়নিক পদার্থ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের গুদামে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এই বিস্ফোরণ দুর্ঘটনা। পরিকল্পিতভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়নি। গুদামে ছয় বছর ধরে মজুত রাখা অত্যন্ত বিপদজনক বিস্ফোরক থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এই ঘটনাকে বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এক টু্‌ইট বার্তায় বলেছেন, কোনো গুদামে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক অনিরাপদভাবে মজুত রাখার বিষয়টি ‘অগ্রহণযোগ্য’।

আউনের সভাপতিত্বে আজ বুধবার (৫ আগস্ট) সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক হয়েছে এবং রাজধানী বৈরুতে দুই সপ্তাহের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এছাড়া আজ থেকে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে ধ্বংসস্তুপের নিচে মানুষকে আটকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, বিস্ফোরণের আওয়াজ ছিল তীব্র ও কান ফাটানো। ভিডিও ফুটেজে অনেক গাড়ি ও ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দেখা গেছে। বন্দর এলাকা থেকে পাওয়া ভিডিওতে প্রথম বিস্ফোরণ স্থল থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা যায়। টুইটারে অনেকে মোবাইল ফোনে তোলা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ভিডিও শেয়ার করেন।

টুইটারে পোস্ট করা এই ভিডিওর সাথে বলা হয়, তারা বিস্ফোরণ স্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকেন ও বিস্ফোরণে তাদের ভবনের কাঁচ ভেঙে গেছে।

প্রথম বিস্ফোরণের পর আরেকটি আরো বড় বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় আশপাশের ভবনগুলো ঢেকে যেতে দেখা যায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, বিস্ফোরণ এত শক্তিশালী ছিল যে তার মনে হয়েছিল তিনি মারা যাবেন।

হাসপাতাল আহতদের ভিড়ে উপচে পড়েছে। নিকটবর্তী হাসপাতালে এত আহত মানুষকে আনা হয়েছে যে সেখানে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের লেবানিজ শাখার প্রধান জর্জ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা ভয়াবহ এই বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করছি। বিস্ফোরণস্থলের পাশে কিংবা সেখান থেকে অনেক দূরের রাস্তাগুলোতে যত্রতত্র আহত ও নিহত মানুষ পড়ে আছে।

এই বিস্ফোরণ ঘটেছে একটা স্পর্শকাতর সময়ে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাফিক হারিরিকে ২০০৫ সালে হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে এ সপ্তাহেই। গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে হারিরির হত্যায় চারজন সন্দেহভাজনের মামলার রায় জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনালের দেবার কথা শুক্রবার। -বিবিসি