সুয়েজ খালে জাহাজ আটকে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম

সুয়েজ খালে একটি কন্টেইনার জাহাজ আটকে বন্ধ হয়ে গেছে জাহাজ চলাচল। জাহাজটি ঘোরানোর সময় অগভীর পানিতে গত মঙ্গলবার ‘এভার গিভেন’ নামের জাহাজটি আটকে যায়। 

এর ফলে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় খালের দুইপাশে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের।

৫৯ মিটার (১৯৪ ফুট) চওড়া এই জাহাজটি টেনে বের করে নিতে কয়েকটি উদ্ধারকারী নৌকা (টাগ বোট) মোতায়েন করা হয়েছে। জাহাজ উদ্ধারে কাজ করছে ড্রেজারও। জাহাজটির একপাশ পানিতে ভেসে থাকলেও অন্যপাশটি মাটিতে আটকে গেছে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে জোর গতিতে উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। 

সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজে নজরদারি ও ট্রাকিংয়ে নিযুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ১২০ মাইল দীর্ঘ এই খাল পার হতে শতাধিক জাহাজ এখন অপেক্ষা করছে। এমনকি আটকে পড়া জাহাজটি সরিয়ে খুব দ্রুত সুয়েজ খাল চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও সৃষ্ট জাহাজ-জট কাটাতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। আর এতে ব্যাহত হতে পারে বিশ্ব বাণিজ্যের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজে নজরদারি করা ট্যাংকার ট্রাকারস’র বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, জাহাজ আটকে পড়ায় সুয়েজ খালে অন্যান্য জাহাজের লম্বা সারি সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরব, রাশিয়া, ওমান ও যুক্তরাষ্ট্রের তেলবাহী ট্যাংকারগুলো পারাপারের জন্য আটকে পড়া জাহাজের উভয়পাশে অপেক্ষা করছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, সমুদ্রে দৈনিক হিসেবে চলাচলকারী জাহাজের ৩০ শতাংশই যাতায়াত করে থাকে সুয়েজ খাল দিয়ে। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বছরজুড়ে প্রায় ১৯ হাজার জাহাজ চলাচল করেছে এই খাল দিয়ে। দৈনিক হিসেবে যা প্রায় ৫২টি।

সুয়েজ খালে আটকে যাওয়া এভার গিভেন জাহাজটি ২০১৮ সালে নির্মাণ করা হয়। পানামায় নিবন্ধনভুক্ত ও দেশটির পতাকাবাহী এই জাহাজটি চীন থেকে নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বন্দরে যাচ্ছিল।

মিসরের সুয়েজ অঞ্চলে ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে যুক্ত করে ১২০ মাইল (প্রায় ১৯৩ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই খালটি খনন করা হয়। ১৮৫৬ সালে গঠিত হয় সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি। প্রায় তিন বছর পর, ১৮৫৯ সালের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় খালটির খননকাজ। ১০ বছর পর ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর নৌ-চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় সুয়েজ খাল। এই খালের আয় দিয়েই পূরণ হয় মিসরের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৮০ শতাংশ।

সুয়েজ খাল খননের আগ পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাহাজগুলোকে ভূমধ্যসাগর থেকে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে, উত্তমাশা অন্তরীপ পাড়ি দিয়ে আরব সাগর হয়ে ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরে যেতে হতো। এই যাত্রা ছিল সময়সাপেক্ষ ও বিপজ্জনক। তবে সুয়েজ খাল খনন ও চালুর পর এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার সেই দূরত্ব বহুগুণে কমে এসেছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //