ইসরায়েলে কেন হামলা করল হামাস

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হামাস আজ শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ শুরু করেছে। ২০২১ সালের পর এবারের এই সংঘাত সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে দেখা দিয়েছে। হামাস বলছে, হামলা শুরুর প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যেই ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ৫ হাজারের বেশি রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

এই হামলার জবাবে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় সেখানেও শত শত মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে আকস্মিক হামলা শুরুর পর গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েল কার্যত আরেকটি প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। 

কিন্তু হঠাৎ কেন ইসরায়েলের ওপর হামলা শুরু করল হামাস?

আক্রমণের কারণ

হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আলজাজিরাকে বলেছেন, গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা যে নৃশংসতার মুখোমুখি হয়েছে, তার জবাবেই হামাস সামরিক অভিযান শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আমরা গাজা উপত্যকায়, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ও আমাদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসায় ইসরায়েলি নৃশংসতার অবসানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তা চাই। এই লড়াই শুরুর পেছনের কারণ এসবই।

হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ বলেছেন, এই পৃথিবীর শেষ দখলদারিত্বের অবসানের সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধের দিন আজ।’ ইসরায়েলে হামলা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস ‘পশ্চিম তীরে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের’ পাশাপাশি আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

হামলার স্থান

ইসরায়েলের তেলআবিব শহরের উত্তরে রকেট হামলা হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক শহরে যোদ্ধাদের পাঠিয়েছে হামাস।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, দেরত শহরে চলন্ত গাড়িতে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে হামাসের বন্দুকধারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলি শহরে গাড়ি নিয়ে ঢুকছে। তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবন ও পথচারীদের ওপর গুলি ছুড়ছে।

হামাসের যোদ্ধারা একাধিক ইসরায়েলি বেসামরিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা ইসরায়েলি সরকারের সহায়তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের একাধিক যুদ্ধবিমান গাজা উপত্যকায় হামাসকে লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করেছে।

বর্তমানে ইসরায়েলের ফার আজা, দেরত, সুফা, নাহাল ওজ, মাজেন, বে’ইরি ও রিম শহরে হামাসের যোদ্ধাদের সাথে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।

হতাহতের সংখ্যা

স্থানীয় গণমাধ্যমে হামাসের হামলায় ২২ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও পাঁচ শতাধিক।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৫৪৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু বলছে, হামাস এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘাতে অন্তত ৪ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে। তাদের বাড়িঘরে অবস্থান অথবা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, গত কয়েক ঘণ্টায় হামাসের যোদ্ধারা গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ব্যাপক পরিসরে রকেট নিক্ষেপ শুরু করেছে। সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করেছে হামাসের সদস্যরা। এই হামলার ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে হামাসকে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশ যুদ্ধে রয়েছে। এই যুদ্ধে ইসরায়েল জিতবে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ বলেছেন, ইসরায়েল ‘অত্যন্ত কঠিন মুহূর্তের’ মুখোমুখি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যা বলছে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল ইসরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই ভয়াবহ সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। সন্ত্রাস ও সহিংসতা কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল এবং এর জনগণের প্রতি সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায় ফ্রান্স। চলমান এই সংঘাতে ইসরায়েলের প্রতি ফ্রান্সের পুরো সমর্থন আছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে, ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //