গাজা ছেড়ে অন্যত্র কোথায় যাবে ১১ লাখ মানুষ

আগামী শনিবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। যেকারণে শহরের উত্তর অংশে বসবাসকারী বেসামরিক বাসিন্দাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাড়িঘর ছাড়তে বলেছে ইসরায়েল। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে ইসরায়েল ইতিমধ্যেই আকাশ থেকে বিপুলসংখ্যক লিফলেট ফেলেছে উত্তরাঞ্চলে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গাজা শহরের সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ধারণা, হামাসের সদস্যরা গাজা শহরের ঘরবাড়ির নিচে থাকা টানেল এবং বিভিন্ন ভবনের ভেতরে লুকিয়ে আছে। তাদের খুঁজে বের করতেই শহরে প্রবেশ করবে পদাতিক সেনারা। 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজা শহরের উত্তর অংশে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর জন্য বড় চিন্তার বিষয় হলো-স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই বিপুলসংখ্যক মানুষ কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন? কারণ ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসংখ্য নারী ও শিশু ছাড়াও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় গুরুতর আহত মানুষও আছে। 

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪১ কিলোমিটার এবং ৬ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে এর প্রশস্ততা। শহরটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত, যেমন-উত্তর গাজা, গাজা, মধ্যাঞ্চল, খান ইউনিস ও রাফাহ। গাজা উপত্যকার সঙ্গে দুটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে এর উত্তর ও পূর্ব দিকে রয়েছে ইসরায়েল সীমান্ত এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে মিশর সীমান্ত। গাজাবাসীর জন্য দুটি সীমান্তই কড়াকড়িভাবে বন্ধ রয়েছে। পশ্চিম অংশজুড়ে থাকা ভূমধ্যসাগরেও তাদের যেতে মানা। 

এদিকে বহু বছর ধরে গাজার আকাশ সীমাও নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। গাজার একমাত্র বিমানবন্দরটিও ২০২২ সালে ধ্বংস করে দিয়েছিল দেশটি। 

এসব দিক বিবেচনায় নিলে ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট গাজার বাসিন্দারা পুরোপুরিভাবেই বাকি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরের বাসিন্দারা তাই খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য ইসরায়েল ও বিদেশি দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভর করে। 

ইসরায়েলের নির্দেশনা অনুযায়ী, গাজার উত্তর অংশে বসবাস করা সাধারণ বাসিন্দাদের দক্ষিণ অংশে সরে যেতে বলা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১১ লাখ বাসিন্দার জন্য সবকিছু ছেড়ে ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে গিয়ে অবস্থান নেওয়া একটি অসম্ভব কাজই মনে হচ্ছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরে প্রবেশ কিংবা এই শহর থেকে বের হওয়ার জন্য দুটি সীমান্ত পথ রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর দিকে রয়েছে ইরজে ক্রসিং। এই ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। আর দক্ষিণ অংশে থাকা রাফাহ ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। দুটি ক্রসিংই এখন গাজাবাসীর জন্য পুরোপুরিভাবে বন্ধ। তৃতীয় আরেকটি ক্রসিং রয়েছে, যার নাম-ক্যারেম শালোম। ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত এই ক্রসিংটি ব্যবহৃত হয় মালামাল পরিবহনের জন্য। 

বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে, চলমান সংঘাতের মধ্যে গাজা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কোনো রাস্তাই খোলা নেই শহরটির বাসিন্দাদের জন্য। তবে গাজা ছেড়ে পালানোর জন্য একটি মানবিক করিডর সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে তাদের জন্য। এই পথ ব্যবহারের জন্য ইসরায়েল অনুমতি দেবে সেই পরিস্থিতি এখন নেই বললেই চলে। আর এই করিডর ব্যবহার করে গাজাবাসীকে যেতে হবে প্রথমে মিসরে। এ ক্ষেত্রে গত বুধবার নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মিসর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের করিডর অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। 

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গাজায় স্থল অভিযান চালালে চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, সাধারণ মানুষকে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরিয়ে গাজায় হামলা চালালে মানবিক পরিণতি হবে বিধ্বংসী। তবে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়াকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়েছে ইসরায়েল। 

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০। জবাবে সেদিনই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩৭ জনে। আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৫০০ শিশু ও ২৭৬ নারী রয়েছেন বলে জানিয়ে শহরের স্বাস্থ্য বিভাগ।


সূত্র- আলজাজিরা, এনডিটিভি, রয়টার্স

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //