ঘরহারা ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর অনীহা কেন

গাজার মানুষদের অন্য প্রান্তে চলে যেতে বলেছে ইসরায়েল। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকা তো দূরের কথা মৌলিক অধিকারের সুযোগও তাদের নেই। গাজা এবং পশ্চিম তীর দুই দিকেই ফিলিস্তিনের মানুষ এখন অনেকটা বন্দীদশায় মানবেতর অবস্থায় রয়েছে।

কিন্তু এই দুই অংশের সঙ্গে যেসব দেশের সীমান্ত, মিশর ও জর্ডান তাদের কেউ এসব মানুষকে ঠাঁই দিতে রাজি নয়। লেবাননও আগ্রহী নয় শরণার্থী নিতে।

এ বিষয়ে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছেন, জর্ডানে কোনো শরণার্থী নয়, মিশরে কোনো শরণার্থী নয়। এই মানবিক সংকট গাজা এবং পশ্চিম তীরের ভেতরেই সামাল দিতে হবে। ফিলিস্তিনি সংকট ও তাদের ভবিষ্যৎ অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া বা চেষ্টা করা যাবে না।

কেন প্রতিবেশী দেশগুলো নিজ দেশে ফিলিস্তিনের মানবেতর অবস্থায় থাকা মানুষদের আশ্রয় দিতে চায় না?

সশস্ত্র গোষ্ঠী তৎপরতা সামাল দিতে সক্ষম নয় মিশর

ফিলিস্তিনের গাজা অংশের সাথে ইসরায়েল ছাড়া সীমান্ত রয়েছে শুধু মিশরের। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিও জর্ডানের বাদশাহর মতো একইভাবে ফিলিস্তিনিদের নিজ দেশে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি সংকট সমাধানের জন্য কোনো সামরিক উপায়ে বা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে যে কোন পদক্ষেপ মিশর প্রত্যাখ্যান করে যেটা এ অঞ্চলে দেশগুলোর ক্ষতি সাধন করতে পারে।

১৯৭৮ সালে মিশর ছিল প্রথম কোনো আরব রাষ্ট্র যারা কয়েক দফা যুদ্ধের পর শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের সাথে সমঝোতায় আসে।

২০০৭ সালে হামাস গোষ্ঠী গাজার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে মিশরও গাজা সীমান্তের কড়াকড়ি বাড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, হামাস যাতে উদ্বাস্তুদের সাথে মিশরে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্যেই এতটা কড়াকড়ি। কারণ বাড়তি সশস্ত্র গোষ্ঠী তৎপরতা সামাল দেয়ার সক্ষমতা মিশরের নেই।

হামাস আশির দশকে সৃষ্টি হয়েছিল মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা হিসেবে। মুসলিম ব্রাদারহুড ২০১১ সালে মিশরের ক্ষমতায় আসলেও এখন তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে হামাসের শেকড়ের সম্পর্কটাও মিশরের জন্য উদ্বেগের।

ইসরায়েলি গ্যাস-পানি নির্ভর জর্ডান

জর্ডানের সাথে ফিলিস্তিনের সীমান্ত পশ্চিম তীরের দিকে। মিশরের মতো জর্ডানেরও রয়েছে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। যেমন গ্যাস তো বটেই, সুপেয় পানির জন্যও ইসরায়েলের উপর নির্ভর করতে হয় জর্ডানের।

তুরস্কের হাসান কালিয়ানচু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. মুরাত আসলানের মতে জর্ডান সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সৌদি আরব, ইসরায়েল ও আমেরিকার উপর নির্ভরশীল।

জর্ডান আমেরিকার মিত্র দেশ, এছাড়া আমেরিকা ও জার্মানির বিমান সেখানে অবস্থান নিয়ে আছে, এমন অবস্থায় ফিলিস্তিন বিষয়ে জর্ডান অনেকটা নিশ্চুপ থাকতে পছন্দ করবে বলে মনে করেন আসলান।

তবে শরণার্থী সমস্যাও জর্ডানের জন্য একটা বড় ইস্যু। ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা যেসব দেশে আশ্রয় নেয় তার মধ্যে শীর্ষে আছে জর্ডান।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৪৮ ও ১৯৬৭ সালের ক্ষত এখনও এ পুরো অঞ্চলের শরণার্থীরা বয়ে বেড়াচ্ছে, তাই গাজার মানুষকে গাজার ভেতরেই সুরক্ষা দিতে হবে।

ফিলিস্তিনের মানুষ একবার বাস্তুচ্যুত হলে আর তাদের আবাস ফিরে না পাওয়ার প্রেক্ষাপটেই এমন বলা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত লেবানন

ফিলিস্তিনের সঙ্গে সীমান্ত না থাকলেও ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্ত থাকা লেবাননও এবারের সংকটে একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে গেছে।

বর্তমানে লেবাননের হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সাথেও ইসরায়েলের সীমান্তে প্রায় যুদ্ধাবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হেজবুল্লাহ কী করবে তার প্রভাব লেবাননেও পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

লেবাননেও বড় সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে। জাতিসংঘের হিসেবে সংখ্যাটি প্রায় চার লাখ ৯০ হাজার। এমনিতেই লেবানন নানা অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত অবস্থায় আছে।

অভ্যন্তরীণ নানা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে দেশটিতে এখন কোনো কার্যকর সরকার বা প্রেসিডেন্ট নেই। রয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা নিয়েও উদ্বেগ।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লেবাননের ক্ষয়ক্ষতি হলে অথবা সেখানে কোনোভাবে ফিলিস্তিনি শরণার্থী স্থানান্তর করা হলে সেটা সামাল দেয়ার পরিস্থিতি লেবাননের নেই।

সূত্র- বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //