ক্রমশ জোরালো হচ্ছে পদত্যাগের দাবি

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন পথে

দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্যসহ গাজায় অমানবিক সহিংসতার দায়ে পদত্যাগের দাবি উঠেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। ডানপন্থি এই নেতা ক্ষমতায় থাকবেন কি না তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সহিংসতার শেষ হলে এক দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন  করা নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন। 

ইসরায়েলের বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের গবেষক টবি গ্রিন বলেছেন, ৭ অক্টোবর সহিংসতা শুরুর আগেও নেতানিয়াহু এবং তার জোটের জন্য সমর্থন কমে গিয়েছিল এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটি আরও অনেক কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, এখন যদি নির্বাচন হয়, তিনি খুব বড় ব্যবধানে হেরে যাবেন।

সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, নেতানিয়াহু এবং তার ডানপন্থি দলের সমর্থন এরই মধ্যে অনেক কমে গেছে। সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেও নেতানিয়াহু হামাসের আকস্মিক হামলার জন্য কোনও দোষ স্বীকার করেননি। নেতানিয়াহুর অনেক মিত্ররা এই ইস্যুতে চুপ রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার মন্ত্রিসভায় বেশি কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী যোগ দিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুকে ক্ষমতা থেকে সরানোর দুটি উপায় আছে। প্রথমত, তাকে নিজে থেকে পদত্যাগ করতে হবে, দ্বিতীয়ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তাকে নির্বাচনে হারাতে হবে। 

মাত্র ২৭ শতাংশ ইসরায়েলির সমর্থন

ইসরায়েলের মাত্র ২৭ শতাংশ মানুষ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরকার পরিচালনার জন্য যোগ্য বলে মনে করেন। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপের বরাতে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট মনিটর এ তথ্য তুলে ধরেছে।

গত শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম মারিভের জন্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠান লাজার রিসার্চ ইসরায়েলি জনগণের ওপর এ জরিপ চালায়। এতে দেখা যায়, মাত্র ২৭ শতাংশ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সবচেয়ে যোগ্য বলে মনে করেন।

জরিপে সবচেয়ে বেশি ৪৯ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দেশটির ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টির নেতা ও ওয়ার ক্যাবিনেটের সদস্য বেনি গ্যান্টজকে সবচেয়ে যোগ্য বলে মনে করেন তারা। 

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান লাজার রিসার্চ প্রায় ৫১৫ জন ইসরায়েলির ওপর জরিপ চালায়। জরিপে ২৪ শতাংশই কোনো নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেনি। জরিপে গ্যান্টজের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টির অগ্রগতির বিষয়টি উঠে এসেছে। 

জরিপে ফল অনুসারে, এখন নির্বাচন হলে ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টি নেসেটের (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) ১২০টি আসনের মধ্যে ৩৯টি আসনই পাবে। আর নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি পেতে পারে ১৮ আসন।   

নেতানিয়াহুর বাড়ির বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ

হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে ক্ষোভ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির হাতে বন্দিদের নিরাপদে উদ্ধারের দাবিও জোরালো হচ্ছে ইসরায়েলে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছেন ইসরায়েলিরা। এসময় হামাসের কাছে বন্দি থাকা ইসরায়েলিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।

গতকাল শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

যদিও বাসভবনের আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। ইসরায়েলি পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা এসময় নানা স্লোগান দেন। এছাড়া জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বাসভবনের চারপাশে পুলিশের বাধা সত্ত্বেও শত শত বিক্ষোভকারী সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এছাড়া ইসরায়েলি বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবেও হামাসের হাতে বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে তাদের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবসহ কয়েক হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেন।

রয়টার্স বলছে, শনিবারের এই বিক্ষোভ এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় যখন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ করা উচিত বলে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি ইসরায়েলি বিশ্বাস করেন বলে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে। মূলত সমীক্ষার এই ফলাফলে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ওপর জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের বিষয়টিই উঠে আসছে।

বাইডেন প্রশাসন কি নেতানিয়াহুকে চায়

চলমান সংকটে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েল সরকারের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছেন সত্য। একই সঙ্গে বাইডেনের শীর্ষ সহযোগীরা নেতানিয়াহুর পতনে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কেমন হতে পারে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সেখানে স্থিতিশীল অবস্থা ফেরাতে বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাব্যতা নিয়ে তারা ভাবছেন।

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বা ইসরায়েলি দূতাবাস এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ইসরায়েলি দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছিল, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বৈঠকে এমন কোনো কথা হয়নি।

বাইডেনের প্রশাসনের কাছে নেতানিয়াহু মোটেই সমাদৃত ব্যক্তি নন। তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থক। একই সঙ্গে নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে ওবামা-বাইডেন প্রশাসনের পরমাণু চুক্তির তুমুল সমালোচক ছিলেন।

মার্কিন প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক দুই কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, বাইডেন প্রশাসন মনে করে, নেতানিয়াহুর ক্ষমতার দিন শেষ হয়ে আসছে। কয়েক মাসের মধ্যে অথবা গাজায় ইসরায়েলি সেনা অভিযান শেষ হওয়ার পর সম্ভবত নেতানিয়াহুকে চলে যেতে হবে। অবশ্য তারা এ-ও বলছেন, ইসরায়েলি রাজনীতি নিয়ে আগাম অনুমান করা কঠিনই বটে।

সূত্র- রয়টার্স, এএফপি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //