সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৮০ জনের বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ বেসামরিক নাগরিক।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম বিদ্রোহীরা সেখানকার কিছু এলাকা দখল করে নিয়েছেন।
ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ও এর মিত্র গোষ্ঠীগুলো বলেছে, গত বুধবার থেকে লড়াই শুরু হওয়ার পর তারা আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশের কয়েকটি ছোট শহর ও গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের বাহিনীগুলো ‘বড় ধরনের সন্ত্রাসী’ হামলা মোকাবিলা করছে এবং বিদ্রোহীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, দুই দিনের লড়াইয়ে ১২১ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই এইচটিএসের সদস্য। এ ছাড়া ৪০ জন সরকারি সেনা ও ২১ জন মিলিশিয়া সদস্য নিহত হয়েছেন।
সংস্থাটি আরও জানায়, বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর ৪৬তম রেজিমেন্টের ঘাঁটি এবং আটটি গ্রাম দখল করেছেন। তারা আলেপ্পো ও রাজধানী দামেস্কে যুক্তকারী মহাসড়কের একটি এলাকা ও একটি মোড় দখলে নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
দেশটিতে ২০১১ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সরকার দমন–পীড়ন চালালে তা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এর পর থেকে এ লড়াইয়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
শুধু ইদলিবই এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানে ৪০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। তাদের বেশির ভাগই চলমান সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
প্রদেশটি কার্যত এইচটিএস নিয়ন্ত্রিত। তবে সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) নামে এখানে তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও সক্রিয় রয়েছে। এই এলাকায় তুরস্কের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিও রয়েছে।
২০২০ সালে সরকার আবার ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে তুরস্ক এবং আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সমঝোতা হয়। এরপর বড় পরিসরে সহিংসতা কমে এলেও মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ, বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকে।
গত বুধবার এইচটিএস ও এর মিত্ররা জানায়, আগ্রাসন প্রতিহত ও শত্রুর পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে তারা হামলা শুরু করে। তাদের অভিযোগ, সরকার ও তাদের মিত্র ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি এবং আগ্রাসন শুরু করে।
কিন্তু এমন সময় এ ঘটনা ঘটল, যখন সিরীয় সরকার ও তার মিত্ররা অন্য কয়েকটি সংঘাতে জর্জরিত। পার্শ্ববর্তী লেবাননে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী বিধ্বস্ত। এই হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সহায়তায় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি একটি পর্যায়ে সরকারের অনুকূলে চলে যায়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : সিরিয়া হায়াত তাহরির আল-শাম গৃহযুদ্ধ
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh