সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী আলেপ্পো। সিরিয়ার সেনাবাহিনী বলছে, হায়াত তাহরির আল শাম বিদ্রোহীদের হামলায় বেশ কয়েকজন সেনা নিহত হওয়ার পর তারা বাধ্য হয়ে সেখানে নতুন করে সেনা মোতায়েন করেছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বাহিনীর হামলায় এরই মধ্যে প্রায় চারশর মতো বিদ্রোহী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ৫০ জনের মতো বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। এদিকে বিদ্রোহী যোদ্ধারা এখন উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হামার দিকে এগোচ্ছেন।
আকস্মিক বিদ্রোহীদের হাতে আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংকট সমাধানে সিরিয়া সরকারের অনীহা এবং রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার ফলে আলেপ্পোয় নতুন করে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে লেবাননে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সিরিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের হামলায় ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছে ইরান ও রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ফোনালাপে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি মন্তব্য করেছেন, সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আকস্মিক হামলা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল রাখা মার্কিন-ইসরায়েলি পরিকল্পনার অংশ। তার ভাষায়, ‘সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো পশ্চিম এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলতে ইসরায়েলের শাসক গোষ্ঠী ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার অংশ।’
বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলার মুখে সিরিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইরান ও রাশিয়া। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিরিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনীকে জঙ্গি গোষ্ঠীদের মোকাবিলায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। সিরিয়ায় ২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই গৃহযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তবে কয়েক বছর আগেই দেশটির বেশির ভাগ অংশে সংঘর্ষ থেমে গিয়েছিল। মিত্র ইরান ও রাশিয়ার সহায়তায় আসাদ বাহিনী সিরিয়ার বেশির ভাগ অংশ এবং সব বড় বড় নগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। ২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের কাছ থেকে উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো নগরের পুনর্দখল নিয়েছিল প্রেসিডেন্ট আসাদের বাহিনী এবং তার মিত্র রাশিয়া, ইরান ও আঞ্চলিক শিয়া বিদ্রোহীরা। ২০২০ সাল থেকে বিদ্রোহীরা তুরস্ক ও রাশিয়ার করা একটি শান্তিচুক্তি মেনে চলছিলেন। এ নিয়ে ইরানের পক্ষ থেকে তুরস্কের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে।
তবে আলেপ্পোয় আকস্মিক হামলা শুরু করেছে হায়াত তাহরির আল শাম। তাদের ঠেকাতে রাশিয়াও হামলা শুরু করেছে। পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে মনে হচ্ছিল মস্কো প্রতীকী হামলা চালানোর আগপর্যন্ত সিরিয়া সরকারকে তাদের প্রধান মিত্র তেহরান ও মস্কো প্রত্যাখ্যান করেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাশার সরকারকে সহায়তায় আলেপ্পোতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ফ্রান্সের পক্ষ থেকে সব পক্ষকে নাগরিক সুরক্ষা দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সিরিয়ার এই পরিস্থিতির জন্য মস্কো ও তেহরাননির্ভরতাকে দায়ী করা হয়েছে।
হায়াত তাহরির আল শাম সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ২০১১ সালে ‘জাবহাত আল নুসরা’ নামে আল-কায়েদার সরাসরি একটি সহযোগী সংস্থা হিসেবে গঠিত হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদিও এই দলটির গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন। শুরুর দিকে সশস্ত্র দলটি প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরুদ্ধে কার্যকর ও ভয়ানক গোষ্ঠীগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। জিহাদি আদর্শই তাদের মূল চালিকাশক্তি ছিল। ফলে ‘ফ্রি সিরিয়া’ নামে বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী জোটের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই জোটের সঙ্গে হায়াত ‘জাবহাত আল নুসরা’ গোষ্ঠীর কিছু মত-পার্থক্য ছিল। ২০১৬ সালে জাবহাত আল নুসরা গোষ্ঠীর নেতা আবু মোহাম্মদ আল জাওলানি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনই পরে ‘হায়াত তাহরির আল শাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh