সিরিয়ায় বিদ্রোহী যোদ্ধাদের হাতে পতনের পর রাশিয়ায় পালিয়ে যান স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ। তবে তিনি মস্কোয় পালিয়ে গেলেও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অক্ষত অবস্থায় মজুত রয়েছে প্রায় ২৬ টন সোনা।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর সময়ও এই একই পরিমাণ সোনা সেখানে রক্ষিত ছিল।
একই সূত্র বলেছে, সিরিয়ায় বিপুল পরিমাণ সোনার মজুত থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুবই সীমিত।
সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যের বরাতে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলেছে, ২০১১ সালের জুনে দেশটিতে সোনার মজুত ছিল ২৫ দশমিক ৮ টন। রয়টার্সের হিসাবমতে, অর্থের অঙ্কে এটি ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের সমান।
সিরিয়ার বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, দেশটির ডলারের রিজার্ভ প্রায় শূন্য হয়ে আসার পেছনে কারণ হলো আসাদ সরকার খাদ্য, জ্বালানি ও যুদ্ধ তৎপরতায় এখান থেকে বেহিসাবি খরচ করেছে।
সূত্রগুলোর একটি রয়টার্সকে বলেছে, নগদ অর্থে বর্তমানে সিরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) ডলারের মতো। অন্যদিকে আরেকটি সূত্র বলেছে, রিজার্ভের পরিমাণ ‘কয়েক শ মিলিয়ন ডলার’।
সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরুর বছর ২০১১ সালের শেষ নাগাদ সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। এর আগের বছর ২০১০ সালে আইএমএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল আনুমানিক ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সম্পর্কে সিরিয়ায় বিদ্রোহী যোদ্ধাদের নেতৃত্বাধীন নতুন ক্ষমতাসীন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ শুরু হলে বাশার আল–আসাদ বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন শুরু করেন। একপর্যায়ে তা গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ২০১৫ সালে রাশিয়া আসাদের পক্ষ হয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেওয়া শুরু করে। সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে আসাদের মিত্র ইরানও। গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে আসাদ দেশের আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে তথ্য আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করা বন্ধ করে দেন।
গৃহযুদ্ধ শুরুর দীর্ঘ ১৩ বছর পর সম্প্রতি বিদ্রোহীদের ঝোড়ো আক্রমণের মুখে ৮ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান বাশার আল–আসাদ। অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হানা দিয়ে সিরীয় পাউন্ড হাতিয়ে নেয়। তবে তারা ব্যাংকের প্রধান ভল্ট ভাঙতে পারেনি। এতে সোনার মজুত অক্ষত থেকে যায়।
অবশ্য বিদ্রোহী যোদ্ধারা দ্রুতই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। স্থানীয় কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানান, চুরি যাওয়া রিজার্ভের কিছু ইতিমধ্যে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে নতুন প্রশাসন।
একটি সূত্র বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ভল্টটি বোমাপ্রুফ। এটি খুলতে তিনটি চাবির প্রয়োজন। প্রতিটি চাবি ভিন্ন ব্যক্তির তদারকিতে। তিনজনের সম্মিলিত একটি কোড ব্যবহার করেই শুধু এ ভল্ট খোলা সম্ভব। গত সপ্তাহে সিরিয়ার নতুন প্রশাসন ভল্ট পরিদর্শন করেছে।
আসাদকে হটাতে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়েছে হায়াত তাহরির আল–শাম (এইচটিএস)। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে সংগঠনটি আল–কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে আল–কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তারা। সংগঠনটির প্রধান মোহাম্মদ আল–জুলানি (আহমেদ হুসাইন আল–শারা)। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দ্রুতই অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করেছে সরকার।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : সিরিয়া বাশার আল আসাদ সোনার মজুত
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh