অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান ‘তীব্র ও বিস্তৃত’ করতে লাখ লাখ রিজার্ভ সেনাকে ডাকার কাজ শুরু করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের বরাতে রবিবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্ত করা ও হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি ভেঙে শুরু হওয়া এই নতুন হামলা এখনো জিম্মিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। বরং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
নতুন অভিযানে গাজার নতুন এলাকায় ঢুকে ‘ভূমির উপরে ও নিচে থাকা সব অবকাঠামো ধ্বংসের’ পরিকল্পনা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, সম্ভবত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন তেলআবিব সফরের পরই এই নতুন ধাপের অভিযান আগামী সপ্তাহে শুরু হতে পারে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি ও হামাসের হাতে থাকা বাকি ৫৯ জন জিম্মির (যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে অনুমান করা হচ্ছে) মুক্তির ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের অভিযান শুরুর পর থেকে আর কোনো জিম্মিকে উদ্ধার করা যায়নি।
এই অবস্থায় গাজার আরও বড় অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েল। লাখ লাখ মানুষ আবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিকে পূর্ণ অবরোধ দেওয়া হয়েছে। সেখানে খাদ্য, পানি, ওষুধের ভয়াবহ ঘাটতি চলছে।
সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলের এই কৌশল মূলত ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা’, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে, যুদ্ধ টেনে নেওয়া আর বারবার রিজার্ভ সেনাদের ডাকার কারণে সেনাদের উপরও প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। অনেকে ইতোমধ্যেই পাঁচ-ছয়বার ডাকার মুখোমুখি হয়েছে। জিম্মিদের পরিবারগুলোর উদ্বেগও বেড়েছে।
তারা বলছে, যদি বেঁচে থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হয়- তবে এখনই হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
তেলআবিবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং সচেতনভাবেই চুক্তিগুলো নস্যাৎ করছেন। যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় ১৯ মাস পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধ-পরবর্তী কোনো পরিকল্পনা এখনো তিনি উপস্থাপন করেননি।
ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, সেনাবাহিনী গাজায় কীভাবে ধাপে ধাপে অভিযান চালাবে, সেই পরিকল্পনা গত শুক্রবার নেতানিয়াহুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা সরকারকে উদ্দেশ করে চিঠি লিখেছেন—যুদ্ধ থামাতে এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে চুক্তির পথ নিতে। শনিবার সন্ধ্যায়ও ইসরায়েলের বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে বিক্ষোভ হয়েছে।
তেল আবিবে এক জিম্মির মা এই লড়াই সম্পর্কে বলেছেন, “একটা অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ”।
গাজায় নিহত আইডিএফের দুই সেনা
রবিবার গাজায় আরও দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। একই দিন ইয়েমেন থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি যোদ্ধারা ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের খুব কাছে আঘাত হানে। জবাবে নেতানিয়াহু পাল্টা হামলার হুমকি দেন।
হুতিরা হুঁশিয়ারি দেয়, তারা ইসরায়েলের সব বিমানবন্দর লক্ষ্য করে বারবার হামলা চালিয়ে এবার তারা আকাশপথ অবরুদ্ধ করবে।
গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই আরও ভয়াবহ। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৪০ জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh