জন লেনন: শান্তি আর মানবতার সুর

জন লেনন। ষাটের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘দ্য বিটলস’ নিয়ে সুরের জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর থেকে শান্তি আর মানবতার সুরে মাতিয়েছেন পুরো বিশ্ব। 

লেনন একাধারে ছিলেন গায়ক, সুরকার, চিত্রশিল্পী, লেখক ও শান্তিকর্মী। ১৯৪০ সালের ৯ অক্টোবর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের লিভারপুলের মাতৃসদন হাসপাতালে জন্ম হয়েছিল গুণী এই শিল্পীর।

১৯৬০-এর দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘দ্য বিটলসে’র অন্যতম সদস্য তিনি। সদা উচ্ছ্বল চার তরুণের কালোত্তীর্ণ এ ব্যান্ড টিকেছিল মাত্র ১০ বছর। ১৯৭০ সালে ভেঙে যায় ‘বিটলস’। তবে এতে থেমে যাননি জন। তার এলোমেলো চুল আর আইকনিক সানগ্লাস ভক্তদের মন জয় করে নিয়েছিল অনেক আগেই। সেইসাথে তার শান্তি আর মানবতার সুর শ্রোতারা লুফে নেয়। ‘ইন মাই লাইফ, হেল্প!’ ‘ইউ’ভ গট টু হাইড ইউর লাভ অ্যাওয়ে’, ‘নরওয়েজিয়ান উড’ কিংবা ‘টুমরো নেভার নোজ’ গানগুলোর জনপ্রিয়তা তারই প্রমাণ।

১৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর! ‘ফোর ফ্যাভস’খ্যাত লেননের জন্য অভিশপ্ত এক রাত হয়ে নেমে এসেছিল। রাত তখন ১১টা, পয়েন্ট থার্টি এইট স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন রিভলবারটি পকেটে নিয়ে ড্রাইভওয়ের অন্ধকারে অপেক্ষা করছিল মার্ক চ্যাপম্যান। ড্রাইভওয়ের বুক চিরে দুটি উজ্জ্বল আলো ক্রমেই এগিয়ে আসছে। মার্ক চ্যাপম্যান অস্থির হয়ে উঠলেন। এই লিমুজিনটা সে ভালোভাবেই চেনে। ডাকোটায় ঢোকার মুখে একটি পাথরের আর্চওয়ে, লিমুজিনটা তার কয়েক হাত আগেই থেমে গেল। তারপরেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন লেনন। মাত্র এক হাতের ব্যবধানে রক্ত-মাংসের সেই জীবন্ত কিংবদন্তি! জন লেনন! চ্যাপম্যান ফিস ফিস করে ডাকলেন। পরমুহূর্তেই নিস্তব্ধ সেই ড্রাইভওয়ে কাঁপিয়ে শোনা গেল গুলির আওয়াজ। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি চালাচ্ছেন চ্যাম্পম্যান। একবার নয়, বারবার।

রাত শেষ না হতেই দাবানলের মতো দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। মার্ক চ্যাপম্যান নামের এক ভক্তের গুলিতে নিহত জন লেনন। তবে গুলি করে পালিয়ে যাননি চ্যাপম্যান। কোট খুলে ল্যাম্পের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

প্রহরী যখন তাকে খুঁজতে যান, তখন চ্যাপম্যান ‘দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই’ বইটি পড়ছিলেন। প্রহরী তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি জানেন, আপনি কী করে ফেলেছেন? ঠান্ডা মাথায় চ্যাপম্যান উত্তর দেন, ‘হুম, জন লেননকে গুলি করেছি’। বইটির একটি পাতায় চ্যাপম্যান লিখে রেখেছিলেন- ‘এটাই আমার স্বীকারোক্তি’। আর এর নিচেই নিজের নামের বদলে তিনি স্বাক্ষর করেন বইটির নায়ক চরিত্র ‘হোল্ডেন কফিল্ড’ নামে। গ্রেফতার হওয়ার সময়ও তার হাতে ধরা ছিল লেননের এলপি রেকর্ড। সেদিন বিকেলেই চ্যাপম্যান লেননের অটোগ্রাফ চেয়েছিলেন, লেনন তাতে সইও দিয়েছিলেন।

২০০২ সালে বিবিসির জরিপে ১০০ শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশের তালিকায় তিনি অষ্টম অবস্থান লাভ করেছেন। ২০০৪ সালে রোলিং স্টোন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ পঞ্চাশ জন শিল্পীর তালিকায় লেননের অবস্থান ছিল ৩৮তম। এছাড়া ‘দ্য বিটলস’ ছিল ১ নম্বর অবস্থানে। জন লেননের মৃত্যুতে টাইম ম্যাগাজিন তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছিল ‘When the Music Died’। পৃথিবীকে আজও জন লেনন মাতিয়ে রেখেছেন তার সুরের মূর্চ্ছনায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //