শুভ জন্মদিন গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমীন

বাংলা গানের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের তালিকা করলে প্রথম দিকে যে নামটি আসবে, তিনি হচ্ছেন সাবিনা ইয়াসমীন। সুরেলা কণ্ঠের মায়ায় তিনি ডুবিয়ে রাখেন শ্রোতাদের। শ্রোতারা ভালোবেসে তাকে ডাকেন গানের পাখি বলে। দেশাত্মবোধক, আধুনিক কিংবা চলচ্চিত্রের গান; সব ঘরানার গানেই সাবিনা ইয়াসমীনের দাপুটে বিচরণ। উপমহাদেশের এক জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে তার খ্যাতি। তার কণ্ঠে জায়গা পেয়ে কালজয়ী হয়েছে অসংখ্য গান।

আজ ৪ সেপ্টেম্বর কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের জন্মদিন। ১৯৫৪ সালের এই দিনে তিনি সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম লুৎফর রহমান ও মা বেগম মৌলুদা খাতুন। সাবিনারা ৫ বোনের মাঝে ৪  বোনই গান করেছেন। তারা হলেন- ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন ও সাবিনা ইয়াসমীন। দাম্পত্য জীবনে সাবিনা ইয়াসমীন এক কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিন ও এক পুত্র শ্রাবণের জননী।

বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন যখন দুর্গাাপ্রসাদ রায়ের কাছে তালিম নিতেন তখন ছোট্ট সাবিনাও উপস্থিত থাকতেন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নিয়েছেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও ও  টেলিভিশনে নিয়মিত গান করতেন।


প্রয়াত বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনায় এহতেশামুর পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমাতে ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন সাবিনা ইয়াসমীন। তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমাতে আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। 

১৯৭১ সালে নঈম গহরের  লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমীনের গাওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিল। 


সাবিনা ইয়াসমীনের গাওয়া গানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ‘কতো সাধনায় এমন ভাগ্য  মেলে’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া  দে’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’, ‘মনেরই রঙে রাঙাবো’, ‘একবার  যেতে দে না’, ‘ও আমার রসিয়া বন্ধু রে’, ‘এই পৃথিবীর পরে’, ‘ সেই রেললাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ’, ‘আমার হৃদয়ের আয়না’, ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’, ‘বাবা বলে গেলো’, ‘একি সোনার আলোয়’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ ইত্যাদি কালজয়ী গানগুলো সাবিনা ইয়াসমীনেরই গাওয়া।

১৯৭৫ সালে ‘সুজন সখী’ সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি আরো ১৩ বার অর্থাৎ  মোট ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেন। যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ইতিহাসে রেকর্ড।

সাবিনা ইয়াসমীন পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভূবনে বিচরণ করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে আর কেউ এত লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রেখে চলতে পারেননি। মরমী শিল্পী সেই আব্দুল আলিম থেকে শুরু করে একালের কোনো উঠতি গায়কের সাথেও অবিরাম গেয়ে চলেছেন গানের পাখি। সুযোগ পেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর. ডি. বর্মণের সুরে গান গাওয়ার, বিখ্যাত কিশোর কুমারের ও মান্না দের সাথেও ডুয়েট গান করেছেন সাবিনা ইয়াসমীন।


সংগীতে অবদানের জন্য বরেণ্য এই সঙ্গীতশিল্পী বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে একুশ পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে গানের জন্য ভারত  থেকে ‘ডক্টরেট’, ১৯৯১ সালে উত্তম কুমার পুরস্কার, ছয়বার বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা রয়েছে তার অর্জনের খাতায়। 

ব্যক্তিগত জীবনে সাবিনা ইয়াসমীন তিনটি বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে প্রথমে বিয়ে করেন আনিসুর রহমানকে। সেই সংসারটি ভেঙে যায়। এরপর আমীর হোসেইনের সঙ্গে ঘর বাঁধেন সাবিনা ইয়াসমীন। সেটিও স্থায়ী হয়নি। সর্বশেষ বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ কবীর সুমনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //