শুভ জন্মদিন জেমস

বাবরি দোলানো ভরাটকণ্ঠের তারুণ্যের উন্মাদনার কিংবদন্তি শিল্পী জেমস। বাংলাদেশের ব্যান্ড ও আধুনিক গানকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম শিল্পী হচ্ছেন নগর বাউল উপাধি পাওয়া জেমস। তিনি শুধু বাংলাদেশেও নয়, ভারতেও খুব জনপ্রিয়।

পুরো নাম মাহফুজ আনাম জেমস। আজ প্রিয় এই শিল্পীর জন্মদিন। ৫৭ পেরিয়ে ৫৮ বছরে পা রাখলেন তিনি। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর তিনি নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে।

তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন। চট্টগ্রাামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকা শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সংগীত জীবনের শুরু।


ফিলিংস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে। জেমস ছিলেন সেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন  রোড’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের অ্যালবাম প্রকাশ করে সুপারহিট হয়ে যান। এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ সালে ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো ‘ফিলিংস’ থেকে  বের করা হয়।

নগর বাউল ব্যান্ডের অ্যালবামগুলো হলো ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘বিজলি’। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো ‘অনন্যা’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই  লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’ ও ‘কাল যমুনা’।

প্রতি বছরেই জেমসের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ভক্ত অনুরাগীরা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজসহ ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষকে খাবার দেন। এবারও হচ্ছে না তার ব্যতিক্রম। 


জেমমের মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন জানান, প্রতি বছরেই দেশের বিভিন্ন জেলার ভক্তরা জেমস ভাইয়ের জন্মদিনটি উদযাপনে নানা আয়োজন করে থাকেন। এবারও এরকম বেশকিছু উদ্যোগের কথা জেনেছি। কিশোরগঞ্জসহ বেশকিছু জায়গায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে জেমস ভক্তদের গ্রুপ ‘দুষ্টু ছেলের দল’। 

আজকের বিশেষ দিনটি কীভাবে কাটাবেন জেমস? ভক্তদের মনের কৌতূহল দূর করতে নগরবাউল মুখপাত্র রবিন ঠাকুর জানান, দিনটি ঘিরে তেমন কোনো আগ্রহ তার নেই। অন্য দশটা দিনের মতোই সাদামাটাভাবে কাটাবেন। দর্শকদের ভালোবাসায় সত্যিই জেমস অভিভূত, ভক্তদের ভালোবাসায় রকস্টার সিক্ত হন। 

তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে এক ভক্ত জন্মদিনের ব্যানার বানিয়ে পাঠিয়েছেন! এসব পাগল ভক্ত আমার জানা মতে আমাদের দেশে আর কারোরই নেই। আমি দেখিও না। 


ভক্তরা পাগল হবেনই না কেন। জেমস যে এক উন্মাদনার নাম। রক, ব্লুজ  থেকে শুরু করে ফিউশন,  ফোক ও মেলোডি গানের মধ্য দিয়ে জয় করেছেন অগণিত ভক্ত-শ্রোতার হৃদয়। ‘ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলা না’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’, ‘দুষ্টু  ছেলের দল’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘বাবা কতদিন  দেখিনি তোমায়’, ‘কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে’, ‘মা’সহ আরও কত কত গান! যেগুলো ভক্ত হৃদয়ে যুগের পর যুগ গাঁথা থাকবে। 

শুধুই কি বাংলা গান? হিন্দি গান  গেয়েও উপমহাদেশের শ্রোতাদের অন্তরে লেখা আছে জেমসের নাম। ‘আলবিদা’, ‘বেবাসি’, ‘ভিগি ভিগি’ গানের মাধ্যমে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ২০০৪ সালে কলকাতার সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করেন জেমস। ২০০৫ সালে বলিউডে ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ভিগি ভিগি গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। 


২০০৬ সালে আবারো বলিউডের ছবিতে কণ্ঠ দেন। ২০০৭ সালে তিনি লাইফ ইন এ মেট্রো চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান দুইটি হলো রিশতে ও আলবিদা। আর তাতেই বাজিমাত। পুরো বলিউডের দর্শক শ্রোতা এখনো জেমসের উন্মাদনায়। করোনাকালে ঘরেই কাটছে তার সময়। শিগগির ফিরবেন কনসার্টে এমন প্রত্যাশা জেমস ভক্তদের।

নিভৃতচারী জেমসের আরেকটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি একজন শখের ফটোগ্রাফার। হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে, আবার প্রিয় কোনো মুখের ছবি তুলে পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভক্তরা ওই সব ছবি লুফে নেন, ফটোগ্রাফির প্রশংসায় ভাসান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //