অপরাধ দমাতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সদস্য বৃদ্ধির ঘোষণা ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, অপরাধ দমাতে বেশ কয়েকটি শহরে বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য পাঠানো হবে।

গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, সহিংস অপরাধ কবলিত এলাকাসমূহে আমি কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছি। সহিংসতার এই তাণ্ডব জাতির বিবেককে হতবাক করেছে।

সহিংসতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় শিকাগোসহ আরো দুটি ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত শহরে এই সদস্যদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিপাবলিকান দলের এই প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু এর আগে পোর্টল্যান্ড ও অরেগন শহরে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এর কারণে চলমান বিক্ষোভের সময়টাতে আরো বেশি উদ্বেগ তৈরি করেছে। নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের পুর্ননির্বাচনের একটি বড় বিষয় হতে পারে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন।

গত ২৫ মে মিনেসোটার মিনেয়াপোলিসে পুলিশি হেফাজতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে। বেশ কিছু শহরে এই বিক্ষোভ থেকে নৈরাজ্যও তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, লস-এঞ্জেলেস, শিকাগো ও মিলওয়াকির মতো মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে বন্দুক নিয়ে সহিংসতা বেড়েছে।

অপারেশন লিজেন্ড 

লিজেন্ড ট্যালিফেরো নামে চার বছর বয়সী এক ছেলে শিশুর নামানুসারে এই কর্মসূচির নামকরণ করা হয়েছে। ওই শিশুটি গত জুন মাসে কানসাসে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকার সময় মুখে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। গতকাল বুধবার প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার সময় ওই শিশুটির মা উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, এই অভিযানে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, মার্শালস সার্ভিস ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থার সদস্যরা স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মিলে কাজ করবে।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ডেমোক্র্যাটরা দুর্বল বলে অভিযোগ তুলে ট্রাম্প বলেন, সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে পুলিশ বিভাগের উপর আক্রমণ এবং এতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে কট্টর আন্দোলন চলেছে। এর জন্য তিনি গুলির ঘটনা, হত্যা, খুন ও ঘৃণ্য সহিংসতার ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

তিনি বরেন, রক্তপাত অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। এই রক্তপাত অবশ্যই বন্ধ হবে। এরপর কোনো মাকে আর তার মৃত শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে না। এর আগে রাজনীতিবিদরা তাদের প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা দিতে ও শহরকে সুরক্ষিত করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার জানান, তারা প্রায় দুই শ' ফেডারেল এজেন্টকে কানসাস সিটি ও মিসৌরিতে পাঠিয়েছেন। এমন সংখ্যক আরো এজেন্টকে শিকাগোতে ও প্রায় ৩৫ জনকে নিউ মেক্সিকোর আলবুকারকিতে পাঠানো হবে। ৬০ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ করা হবে যাতে সহিংসতা কবলিত শহরগুলোতে আরো বেশি সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা যায়।

বার বলেন, ‘অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্ধিত শাখা যুক্ত হবে। পোর্টল্যান্ডে দাঙ্গা ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে যেভাবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এজেন্টদের নিয়োগ করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই এটি করা হবে।

গত ডিসেম্বরে সাতটি শহরে অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণে আনতে একই ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

পুলিশের তথ্য থেকে জানা গেছে, এই গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বন্দুক হামলা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। শিকাগো শহরে চলতি বছর ১ হাজার ৬৪০টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ও এতে ৪১৪ জন নিহত হয়েছে। শিকাগোতে কেবলমাত্র গত সপ্তাহান্তে ৬০ জনেরও বেশি লোক বন্দুক হামলার শিকার এবং ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া নিউইয়র্কেও বন্দুক সহিংসতা সর্বোচ্চ মাত্রায় বেড়ে গেছে।

এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। কর্মকর্তারা এর জন্যে করোনাকালীন সংকট, প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংয়ের দ্বন্দ্ব ও বন্দুকের সহজলভ্যতাকে দায়ী করছেন।

২০১৮ সালে এফবিআইয়ের করা এক জরিপ বলছে, আলবুকারকি শহরে সহিংস অপরাধ জাতীয় গড়ের চেয়ে ৩.৭ গুণ বেশি। সে বছর হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ ছিল।

কানসাস সিটি স্টারের মতে, শহরটিতে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুধু কানসাস শহরেই এ পর্যন্ত ১১০টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর পুরো মেট্রো এলাকাতে আরো ৫০টির মতো হত্যার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। - বিবিসি ও এএফপি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //