ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেন দায়িত্ব নেবার পর সবচেয়ে প্রথম যে পদক্ষেপগুলো নেবেন ইতিমধ্যেই তার পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছেন।
সেই পদক্ষেপে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। তার শিবির থেকে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়া হবে ও মার্কিন নাগরিকদের মাস্ক পরতে বলা হবে।
বাইডেন অর্থনীতি, জাতিগত বৈষম্য ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোয় ভোট গণনা এখনো চলছে। তবে পেনসিলভানিয়ায় জয়ের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সময় গত শনিবার বাইডেনের জয় নিশ্চিত করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ও নেটওয়ার্কগুলো। জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন বাইডেন। আর ডেমোক্র্যাটরা তাদের পরিকল্পনা অনুসারে সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের বিষয়টি।
ট্রাম্পের অধীনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে করোনাভাইরাস মহামারিকে যেভাবে হালকাভাবে দেখা হয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্বকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রেই।
বাইডেন ট্রাম্প প্রশাসনের এসব নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার বিজয়ী ভাষণেই একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন যারা করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় নেতৃত্ব দেবেন।
বাইডেন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে চান। সব মার্কিন নাগরিকদের জন্য নিয়মিত বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ব্যবস্থা ও সবার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক নির্দেশিকা প্রচলন করতে চান।
করোনা মহামারির কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নানা পদক্ষেপ পরিকল্পনা হচ্ছে। করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। উৎপাদন বৃদ্ধি, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, হাতের নাগালে শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদের বৈষম্য কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বাইডেনের।
সেইসাথে ট্রাম্পের নেয়া নীতিমালাগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করবেন তিনি। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেনের জয় এখনো অনুমান। যেহেতু কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে এখনো ব্যালট গণনা চলছে। তবে বাইডেন শিবির জানুয়ারিতে নেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
মার্কিন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে- ট্রাম্পের নেয়া বেশকিছু বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ, যার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন দরকার হয় না, সেগুলোকে আগের অবস্থানে নেবার পরিকল্পনা করছেন বাইডেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাতে আবারো যোগ দেবে দেশটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই সিদ্ধান্ত বদলে দেবেন বাইডেন। যে সাতটি দেশের নাগরিকদের উপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রত্যাহার করা হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়কার কিছু নীতিকে পুনর্বহাল করবেন। বিশেষ করে শিশু বয়সে যারা কোনো বৈধ কাগজ ছাড়া অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া।
বাইডেন তার বিজয়ী ভাষণেও আসছে দিনগুলোতে তার নীতিমালা সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দিয়েছেন।
বর্ণবৈষম্য মোকাবেলা
বাইডেন এমনই এক সময়ে দায়িত্ব নেবেন যখন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের একের পর এক মৃত্যুকে ঘিরে দীর্ঘ সময়ে সহিংস বিক্ষোভে চলেছে।
ট্রাম্পের সময়ে বর্ণভিত্তিক বিভেদ বৃদ্ধি ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের উত্থান হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাইডেন বর্ণভিত্তিক বৈষম্য উচ্ছেদকে তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত হিসেবে তৈরি করতে চান।
তিনি সরকারি তহবিল ব্যবহার করে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চান। কৃষ্ণাঙ্গ, ল্যাটিনো ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পদের বৈষম্য দুর করতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাতে আরো জোরালোভাবে কাজ করে সেটি নিশ্চিত করতে চান।
পুলিশ বাহিনীর জন্যেও কিছু পরিবর্তন পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশেষ করে কোনো অপরাধীকে আটক করার সময় কিছু শক্তি প্রদর্শনের পন্থা। পুলিশ প্রশাসনে সংস্কারের জন্য একটি কমিশন করার কথাও ভাবছেন তিনি।
নতুন প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন। সে সময় পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিসভা গঠন ও পরিকল্পনার কাজে ব্যয় করবেন। -বিবিসি
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh