শিশু-কিশোরদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে

করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে পারে ছোটরা- এমন সতর্কবাণী ছিলই। চলতি আগস্ট মাসেই তার প্রতিফলন নজরে পড়তে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। 

গত এক সপ্তাহে দেশটিতে অন্তত ৭২ হাজার শিশু ও কিশোর-কিশোরী সংক্রমিত হয়েছে সার্স-কোভ-২-এ। মহামারিকালে ছোটদের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক সংক্রমণ চোখে পড়েনি। জুন মাসের তুলনায় সংক্রমণের সংখ্যা পাঁচ গুণ বেড়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেল‌্‌থের ডিরেক্টর ফ্রান্সিস কলিনস বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট। এখন করোনার যে ভ্যারিয়েন্টটি ছড়াচ্ছে, সেটি শিশুদের গুরুতরভাবে কাবু করতে সক্ষম। লুইজিয়ানার হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে খবর মিলেছে- কয়েক মাসের শিশুও সংক্রমিত হয়েছে। অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, তোমার বয়স কম, চিন্তা নেই। কিন্তু তেমনটা নয়। চিন্তা থাকছেই।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মা-বাবার উচিত টিকাকরণ নিয়ে আর একটু গুরুত্ব দিয়ে ভাবা। কোনো শিশুর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি (মা-বাবা বা অন্য কেউ) যদি টিকা না নিয়ে থাকেন, তাহলে দ্রুত টিকা নিয়ে নেয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, মহামারি সম্পর্কে ছোটদের সাথে বিস্তারিত কথা বলা। যাতে তারা করোনাবিধি যতটা সম্ভব মেনে চলে। শিশুদের যদি টিকা নেয়ার সুযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে টিকা দেয়া ও টিকার উপযোগিতা সম্পর্কে বোঝানো। শিশুর সংস্পর্শে আসা সকলে যাতে মাস্ক পরেন ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে মা-বাবাকে।

স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের শিশু বিভাগের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইভোন মালডোনাডো বলেন, আপনার সন্তান যে গাড়িতে বসে, তার চালক যদি সিট বেল্ট না পরেন, কিংবা তার যদি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকে, আপনি কি সন্তান ওই গাড়িতে যেতে অনুমতি দেবেন! নিশ্চয়ই নয়। বিষয়টা তেমনই।

ওহাইওর একটি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডেন স্নাইডারের কথায়, করোনাবিধির প্রতিটি খুঁটিনাটি ছোটদের পক্ষে মেনে চলা হয়তো কঠিন। এ অবস্থায় পরিচ্ছন্নতার উপরে জোর দেয়া জরুরি। হাত পরিষ্কার থাকলে, সে অনেকটাই বিপন্মুক্ত। তাই বারবার হাত ধোয়া উচিত। এছাড়া ছোটদেরও মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি বজায় রাখার মতো কোভিডবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসের ঘোষণা, বয়স ২ বছরের ঊর্ধ্বে হলেই মাস্ক পরতে হবে। টিকা নেয়া হয়ে গেলেও মাস্ক আবশ্যিক। বিশেষ করে যখন শিশু স্কুলে যাচ্ছে। 

ওয়াশিংটনের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সারা কোম্বের কথায়, সন্তানকে বোঝান, সুপারম্যানও তো মাস্ক পরে। ওই রকম বা অন্য কোনো প্রিয় কার্টুন চরিত্রের মতো মাস্ক কিনে দিন। মাস্ক জরুরি।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রস অ্যাধানম গ্যাব্রিয়েসুস আবেদন জানিয়েছেন, অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনার টিকার অতিরিক্ত বুস্টার ডোজ় প্রয়োগ বন্ধ রাখা হোক। ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকাদানের ব্যবধান বাড়ছে। তা কমিয়ে আনতেই বুস্টার ডোজ বন্ধ রাখা দরকার।