কাবুলে প্রাণঘাতী ড্রোন হামলায় কোনও মার্কিন সৈন্যের সাজা হবে না

আফগানিস্তানে আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো ড্রোন হামলায় ১০ জন বেসামরিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছিল; এ ঘটনায় কোনও মার্কিন সৈন্যকে দায়ী করা হবে না এবং তাদের কোনও শাস্তি হবে না।

গত সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র এ কথা জানিয়েছে।

এই হামলার ঘটনা ঘটে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর মার্কিন নেতৃত্বে কাবুল থেকে মানুষ সরিয়ে নেবার কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে।

এই হামলায় প্রাণ হারায় সহায়তাকর্মী আহমাদি ও তার পরিবারের নয়জন সদস্য, এদের মধ্যে সাতজনই শিশু ছিল।

মার্কিন গোয়েন্দারা ধারণা করছিলেন, ওই সহায়তা কর্মীর গাড়ি ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখা আইএস-কে’র কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি ২৯ আগস্টের ওই ড্রোন হামলাকে ‘মর্মান্তিক ভুল’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

পেন্টাগনে তাদের চালানো একটি উচ্চ পর্যায়ের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার যে রিপোর্ট নভেম্বর মাসে প্রকাশ করেছে, তার উপসংহারে বলা হয়েছে, ওই হামলায় যেহেতু কোনও আইন ভঙ্গ করা হয়নি এবং যেহেতু কোন অসদাচরণ বা অবহেলার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই কারও বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন তারা দেখছে না।

মার্কিন বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে যে পেন্টাগনের এই পর্যালোচনা রিপোর্ট সোমবার অনুমোদন করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।

কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রায় ১৭০ জন বেসামরিক মানুষ ও ১৩ মার্কিন সৈন্য নিহত হওয়ার কয়েকদিন পর যুক্তরাষ্ট্র এই ড্রোন হামলা চালায়।

কী ঘটেছিল কাবুলের ওই ড্রোন হামলায়?

মার্কিন বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু ছিল ত্রাণ কর্মী জামাইরি আহমাদির গাড়ি। বিমানবন্দর থেকে তিন কিলোমিটার (১.৮ মাইল) দূরে ছিল তার বাসা। তিনি গাড়ি চালিয়ে বাসায় পৌঁছে বাসার চত্বরে তার গাড়ি রাখার সময় গাড়ির ওপর ড্রোন হামলাটি চালানো হয়।

বলা হয় যে, এই গাড়িটি আইএস-কে সংস্থার একটি ভবনের চত্বরে দেখা গেছে এবং ওই জঙ্গি সংগঠনের আরেকটি হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে অন্য যেসব গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, এই গাড়িটির গতিবিধি সেই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।

ড্রোন হামলার ওই্ বিস্ফোরণের কারণে দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে। মার্কিন কর্মকর্তারা প্রথমে বলেন যে ওই গাড়ির ভেতরে যে বিস্ফোরক পদার্থ ছিল, দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি তারই প্রমাণ।

তবে পরে তদন্তে দেখা যায় যে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটেছিল খুব সম্ভবত তার বাসার ড্রাইভওয়েতে রাখা প্রোপেন গ্যাসের একটি ট্যাংক ফেটে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি জানান, মারা যাওয়া সহায়তা কর্মীকে আইএসকের সদস্য ভেবে ভুল করেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা।

আহমাদির আত্মীয়রা জানিয়েছিলেন, আহমাদি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।

কাবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার কয়েকদিন পরই ভয়াবহ ড্রোন হামলাটি করা হয়। তালেবানের ক্ষমতায় আসাকে কেন্দ্র করে সেসময় কাবুল বিমানবন্দর হয়ে যাত্রীদের আফগানিস্তান ছাড়ার হিড়িক চলছিল।

কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পর ওই ড্রোন হামলাটি ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর শেষ কার্যক্রমগুলোর একটি। -বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //