সরে গেলেন ডিস্যান্টিস

প্রার্থীতার দৌড়ে অপ্রতিরোধ্য ট্রাম্প

নিউ হ্যাম্পশায়ারে ভোট কাল

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নিকটতম ও জনপ্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবং ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। 

গতকাল রবিবার (২১ জানুয়ারি) এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

গত সোমবার মধ্য-পশ্চিম আমেরিকার আইওয়া প্রদেশে 'রিপাবলিকান ককাস' এ প্রাথমিক (প্রাইমারি) নির্বাচনে তিন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যে ভোটে জাতিসংঘে আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি (৫১) ও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে (৪৫) বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (৭৭)। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইওয়া অঙ্গরাজ্যে বড় আকারে বিনিয়োগ করেও পরাজিত হয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়েন ডিস্যান্টিস। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বিশ্লেষকরা ডিস্যান্টিসকে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু দ্রুত তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

ডিস্যান্টিসের বিদায়ে দুই দিন পরে নিউ হ্যাম্পশায়ারে পরবর্তী প্রাইমারিতে ট্রাম্পের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকছেন নিকি হ্যালি। ট্রাম্পের সঙ্গে এবার সরাসরি লড়বেন নিকি হ্যালি। এক সমাবেশে হ্যালি বলেন, 'সবচেয়ে যোগ্য নারী (প্রার্থীর) জয় হোক'। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা চললেও রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন তিনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।

ডিস্যান্টিসের সমর্থকরা নিকি হ্যালির পরিবর্তে ট্রাম্পের প্রতি তাদের সমর্থন জানাবেন বলেই প্রত্যাশা করছেন বিশ্লেষকরা। নিউ হ্যাম্পশায়ারে ভোটারদের মাঝে পরিচালিত এক জরিপ মতে ডিস্যান্টিসের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থক ট্রাম্পকে 'দ্বিতীয় পছন্দ' হিসেবে দেখেন।

ট্রাম্পের আশা কি?

রবিবার সন্ধ্যায় নিউ হ্যাম্পশায়ারের রোচেস্টারে এক সান্ধ্যকালীন সমাবেশে ট্রাম্প ফ্লোরিডার গভর্নরের প্রশংসা করেন এবং জানান, দুইজন (তিনি ও ডিস্যান্টিস) একসঙ্গে কাজ করে সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রতিযোগী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পরাজিত করবেন। জরিপের ফল বাস্তবে পরিণত হলে, নিউ হ্যাম্পশায়ারে অন্তত ১০ শতাংশ ভোটে নিকি হ্যালিকে হারাবেন ট্রাম্প। ট্রাম্প আশা করছেন, টানা দুইটি প্রাইমারিতে জিতলে তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।

সাউথ ক্যারোলাইনাতেও তিনি জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন। সেখানে ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই অঙ্গরাজ্যে ২০১১-২০১৭ মেয়াদে গভর্নর ছিলেন নিকি হ্যালি। সেখানে পরাজিত হলে তিনিও সম্ভবত প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবেন। বেশিরভাগ জরিপ মতে ৭০ শতাংশ রিপাবলিকান ট্রাম্পকে পছন্দ করেন। যার ফলে ডিস্যান্টিস চেষ্টা করেন ট্রাম্প-ভক্ত ভোটারদের মন জয় করতে, এবং একইসঙ্গে, যারা তাকে ঘৃণা করেন, তাদেরকেও দলে টানার চেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু এই দুই নৌকায় পা দেওয়ার কৌশল কাজে আসেনি। ট্রাম্প-ভক্তদের কাছে নিজেকে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন তিনি। আর যারা ট্রাম্পের বিকল্প চান, তাদের ভোটও ডিস্যান্টিসসহ অন্যান্য প্রার্থীদের মাঝে ভাগ হয়ে যায়। যার ফলে তার জনপ্রিয়তা সার্বিকভাবে কমতে থাকে।

নিকি হ্যালি কি বলছেন?

আমেরিকার আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান, তাহলে তার রানিংমেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) হবেন না নিকি হ্যালি। আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারের ভোটারদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত রিপাবলিকান নেতা হ্যালি। আমেরিকার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন ট্রাম্প ও হ্যালি। এই দৌড়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর হ্যালি। তবে লড়াইয়ে হ্যালির চেয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে কাল মঙ্গলবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে ভোট (প্রাইমারি) হবে। এই ভোটকে হ্যালির জন্য ‘শেষ সুযোগ’ মনে করা হচ্ছে। হ্যালি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তিনি দ্বিতীয় হওয়ার জন্য লড়বেন না।

নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাইমারি সামনে রেখে গত শুক্রবার অঙ্গরাজ্যটিতে আয়োজিত এক নির্বাচনী অনুষ্ঠানে ভোটারদের উদ্দেশে হ্যালি বলেন, তিনি কারও ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে চান না। এমন চিন্তা তার ভাবনায় নেই। হ্যালি বলেন, সব সময়ই বলে এসেছেন, তিনি এই খেলা (ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়া) খেলতে যাচ্ছেন না। তিনি কারও ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে চান না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তার প্রশাসনে কাজ করেছিলেন হ্যালি। তিনি জাতিসংঘে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে হ্যালি আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন।

নিউ হ্যাম্পশায়ারে ভোট কাল

আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটকে হ্যালির জন্য ‘শেষ সুযোগ’ মনে করা হচ্ছে। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে রিপাবলিকানদের প্রার্থী কে হবেন, তা বাছাই করছেন দলটির সদস্যরা। বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আইওয়া থেকে। সেখানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি হবে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি সামনে রেখে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন ট্রাম্প ও হ্যালি। দুজনই একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইওয়ায় বড় জয়ের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রমাণ করেছেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনিই রিপাবলিকানদের প্রার্থী হওয়ার জন্য সবচেয়ে যোগ্য। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজের আধিপত্যও ধরে রেখেছেন ট্রাম্প। এদিকে হ্যালির জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে চমকে দেওয়ার মতো কোনো ফল না পেলে হ্যালির প্রার্থী হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে তৈরি অনিশ্চয়তা আরও জোরালো হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //