আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম
কানাডার মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার কূটনীতিকদের বহিষ্কার ও সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেছেন, নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় এজেন্টরা সরাসরি জড়িত ছিলেন- এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ পেয়েছে পুলিশ। এরপরই তার সরকার প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
ভারতীয় এজেন্টদের বিরুদ্ধে ‘হত্যাকাণ্ড, জবরদস্তি ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে কানাডীয় পুলিশ বলছে, ওই এজেন্টরা খালিস্তানপন্থি আন্দোলনের সমর্থকদের নিশানা করেছে, যারা ভারতে শিখদের জন্য আলাদা আবাসভূমি চায়।
দিল্লি এই অভিযোগগুলোকে ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করে ট্রুডোর বিরুদ্ধে কানাডার বিশাল শিখ সম্প্রদায় নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অভিযোগ তুলেছে।
গতকাল সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত বক্তব্যে ট্রুডো বলেন, কানাডায় ‘অপরাধমূলক' কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে ভারত ‘মৌলিক ভুল' করেছে এবং সবশেষ অনুসন্ধান অনুযায়ী তার সরকারকে কাজ করতে হবে। আরসিএমপি (রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ, কানাডার জাতীয় পুলিশ সেবা) যে প্রমাণ সামনে এনেছে তা উপেক্ষা করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘এটি এই সিদ্ধান্তে নিয়ে যায় যে, কানাডায় জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা অপরাধমূলক কার্যক্রম মোকাবেলা করা প্রয়োজন। এজন্যই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
সব অভিযোগ তীব্রভাবে অস্বীকার করে ভারত বলছে, কানাডা তার দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেনি।
বিবিসি লিখেছে, নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ কানাডার কাছে রয়েছে- এই কথা ট্রুডো বলার পর থেকে দিল্লি ও অটোয়ার মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে।
এ নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে কানাডাকে কয়েক ডজন কূটনৈতিককে প্রত্যাহার করতে এবং ভিসা পরিষেবা স্থগিত করতে বলেছে ভারত।
সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডার অভিযোগ শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকারীদের মাধ্যমে প্রভাবিত।
কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার স্টুয়ার্ট রস হুইলারসহ ছয় কূটনীতিককে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কানাডার পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিতে হুইলারকে তলব করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই বৈঠকের পর হুইলার সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের চাওয়া অনুযায়ী প্রমাণ দিয়েছে কানাডা, এখন অভিযোগের তদন্ত করা দরকার।
আমাদের দেশ এবং আমাদের দেশের জনগণ উভয়ের স্বার্থেই এর মূলে যাওয়া প্রয়োজন।
দিল্লির প্রতিক্রিয়ায় হাই কমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মার ৩৬ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এও বলেছে, তারা তাদের শীর্ষ দূত ও অন্যান্য কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কানাডার বর্তমান সরকারের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। তাই হাই কমিশনারও লক্ষ্যবস্তু হওয়া অন্যান্য কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
গতকাল কানাডার পুলিশ বলেছিল, আমাদের দেশের জননিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি তৈরি হওয়ায় চলমান তদন্ত সম্পর্কে তথ্য প্রকাশে অস্বাভাবিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সারে শহরে একটি শিখ মন্দিরের বাইরে দুই মুখোশধারী বন্দুকধারীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন হরদীপ সিং নিজ্জার। শিখদের পৃথক আবাসভূমির দাবিতে চলমান খালিস্তান আন্দোলনের সোচ্চার এই সমর্থক প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলতেন।
এ কারণে ভারত অতীতে তাকে একজন সন্ত্রাসী হিসাবে বর্ণনা করেছিল। দেশটির দাবি, নিজ্জার বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন। এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল তার সমর্থকরা। তার হত্যাকাণ্ডকে 'টার্গেটেড অ্যাটাক' বলে বর্ণনা করেছে কানাডা পুলিশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রুডো কানাডার পার্লামেন্টকে বলেছিলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। কানাডার মাটিতে ওই হত্যাকাণ্ডকে ট্রুডো নিজের দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিখদের বাস মূলত পাঞ্জাব প্রদেশে। এর বাইরে বাইরে কানাডাতেই শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh